ঝরোখার কিনারে বসে আনমনা রূপসী ,
ঈষৎ বেঁকানো গ্রীবায় এলো খোঁপা খানি,
গোধূলির লালিমায় রেঙেছে চিবুক -
সিঁথির কুঙ্কুম যেন পদ্মরাগ মণি ।
চকিত চঞ্চল তার কালো দুটি আঁখি,
মধুর আবেশে মগ্ন কোন সে স্বপনে -
থেকে থেকে ফিরে চায় কোন সে আশায়?
রাজঅন্তঃপুরবাসিনী কিশোরী কমলা,
রাওয়াল কুমার তিলস্কির নবপরিণীতা ।
সেদিন ছিল বৈশাখী পূর্ণিমা,
বেজেছিল মঙ্গল শঙ্খ, নহবতে বেহাগের সুর,
নিভৃত বাসরে বেলা চামেলির সুরভি মধুর ।
‘এ কোন চাঁদ চাঁদনীকে মানায় হার?’
অস্ফুটে শুধান কুমার ।
ওড়নির আড়ালে লজ্জায় থিরথির
কিশোরী কমলা, নবপরিণীতা রাজবধু ।
নিভৃত বাসরে গর্জে ওঠে রনভেরি -
ফিরোজ শাহের সেনারা ঘিরেছে মরুদুর্গের দেউড়ি,
‘বিদায় দাও প্রিয়ে, যেতে হবে আজি ডেকেছে মাতৃভূমি’ ।
বরবেশ ছেড়ে বীরবেশে সাজে তিলস্কি রাওয়াল;
স্বামীকে রণটিকা পরায় কমলা,
ঠোঁটে আধো হাসি চোখে ভরা দীঘি টলমল ।
গভীর আবেশে হাতে হাত রেখে বলেন কুমার,
‘বাসর শয্যা থাকুক পাতা, ফিরব রানি,
তোমায় আমায় পূর্ণ হবে মিলন রাতি’ ।
ঝরোখার পাশে আঁখি মেলে বসে কিশোরী বধূ
বাসর শয্যা তেমনই পাতা, ফুল শুকিয়েছে শুধু ।
হাল্কা পায়ের আওয়াজে কমলা চমকে চায়
এই বুঝি দাসী আনল খবর, আসছেন স্বামী তার ।
দাসী নয় রানী রাজসি দেই -
‘সাজ বধূ আজ রাঙা চেলী আর ফুলসাজে
বাসর তোমার সফল হবে আজ রাতে’ ।
নতুন বসন, ফুল আভরন গলায় যূথীর মালা
শ্বেত চন্দন রাঙা কুঙ্কুমে অপরূপা কমলা ।
আকাশের চাঁদ আজও আছে সাথে, আছে সেই মধুরাত
ফুলডোর নয় অঙ্গার আজ সাজাল বাসর তার ।
যবন নিধনে রাজপুত বীর সাকা বেঁধেছে মাথে,
পুরনারী সব জহর আগুনে মরণ খেলায় মাতে ।
কুমারের পাগ বুকে নিয়ে বধূ আগুনকে করে সাথী
অবশেষে তার পূর্ণ হোল মহা মিলন রাতি ।।
পরিশিষ্টঃ দিল্লীশ্বর ফিরোজ শাহ্ তুঘলকের আক্রমন রুখতে জয়সলমির
দুর্গে সাকা অর্থাৎ মাথায় গেরুয়া কাপড় বেঁধে মৃত্যুপণ করে যুদ্ধ করেছিলেন ১৭০০
রাজপুত আর জহরের আগুনে প্রাণ দিয়েছিলেন ১৬০০০ পুরনারী । যুদ্ধে রাওয়াল ডুডোজি ও
কুমার তুলস্কির মৃত্যু হয় । এই কবিতার প্রেক্ষাপট এই ঐতিহাসিক ঘটনার ভিত্তিতেই । কবিতার
কুমার তিলস্কি ও রানি রাজসি (রাওয়াল ডুডোজির মহিষী) ঐতিহাসিক চরিত্র, কমলা আমার
কল্পনা প্রসূতা ।