মারকাটারি রঙের শিফন আঁচল
দুলিয়ে সে হেঁটে যায়,
সরু কোমরের হালকা
দুলুনিতে জাগিয়ে মাদকতা।
‘সাজের ঘটা দেখে গা জ্বলে
যায়’,
‘শাড়ী পরারই বা কি ছিরি,
ঢাকছে না খুলছে বোঝা দায়!’ –
পাড়াতুতো মাসীমাদের
মজলিশের এহোল নিত্য আলোচনার বিষয়।
‘অত রাত বিরেতে ফেরে,
মেয়েটা করে কি?’ –
জ্যেঠুদের সান্ধ্য
আড্ডাতেও এ নিয়ে নেই জল্পনার শেষ।
‘বাপটারই বা কি আক্কেল,
শাসন নেই মোটেও?
আর কচি বাচ্চা দুটো,
তাকিয়ে দেখে ওদের দিকে? ভারি মা হয়েছেন!’ -
ঘোষগিন্নির পানে রাঙা
ঠোঁটের কোনে স্পষ্ট বিরক্তি।
‘এসব মেয়ের কতা আর
বোলোনেকো বৌদি, সাধে কি বর নিরুদ্দেশ?’ –
তাল দেয় কাজের মাসি,
মন্দমেয়ের সমালোচনায় ঘুচে যায় শ্রেণিভেদ।
গলির মোড়ের চায়ের দোকানে
শিবু, পটা, লিন্টনের চোখে নিল্লজ্জ কাম,
‘মালটা হেভি’ হিসহিসে
মন্তব্যে ছোটে হাসির ফোয়ারা।
‘সমীর বাবু, একতলাটা তো
এবার ছাড়তে হয় -
মেয়ে জামাই আসছে
কোলকাতায়, ঘরগুলো চাই’।
বাড়িওয়ালার কথায়
ফ্যালফ্যালে চাহনি নড়বড়ে বৃদ্ধের,
বাজারের থলে ধরা হাত
আশঙ্কায় থরোথরো।
‘কোথায় যাবো রায় মশাই?
আমি অসুস্থ, দুটো দুধের শিশু,
সবই তো মেয়েটার ঘাড়ে’ বৃদ্ধের
গলায় মিনমিনে কাকুতি।
‘আপনার ওই মেয়ে থাকতে আর চিন্তা কি মশাই? যত ঝামেলা তো আমাদের মত ছাপোষাদের’
কথাটা হাওয়ায় উড়িয়ে ওপরে উঠে যান রায় মশাই;
কটু ইঙ্গিত বুঝিবা ছুঁতে পারেনা বৃদ্ধকে।
রাত তেমন গভীর নয়, তবে পাড়াটা ঘুমিয়ে পরেছে;
বড় রাস্তার মোড়ে গাড়ী থেকে নেমে যায় মিতালী রোজকার মতই,
বাকি পথটা হেঁটেই পার হবে।
গলির মোড়ের আধো অন্ধকারে একটা ছায়া ঘন হয়,
‘ফোন করলে ধরোনা, এস-এম-এস এর জবাব নেই;
আমাকে পুড়িয়েই বুঝি তোমার সুখ?’ –
মোলায়েম সুশিক্ষিত কন্ঠস্বরে ফুটে ওঠে আর্জি।
‘সামনের উইকেন্ডে যাবে মন্দারমনি, মিতা?’
ল্যাম্প পোস্টের আলোয় স্পষ্ট হয় সুবেশ চেহারা।
‘বাইপাসের প্রজেক্টটায় একটা ফ্ল্যাট ভেবে রেখেছি তোমার জন্যে’।
আকস্মিক চড়টা আঘাত ছাড়িয়ে বিস্ময় জাগায়;
‘ফের যোগাযোগের চেষ্টা করলে দোলা সব জানবে’ –
তীক্ষ্ণস্বরে বিপজ্জনক শীতলতা।
‘দোলা আমার বন্ধু, কথাটা ভুললে বিপদ আপনারই’।
বিদ্যুৎ বেগে এগিয়ে যায় মন্দ মেয়ে, তার প্রতি পদক্ষেপে আজ বাঘিনীর দৃপ্ততা।।
***