‘রাগ করেছো?’ মোবাইলে মেসেজটা দেখে ভাবতে বসলাম
কাকে কাকে দুএকদিনের মধ্যে দাঁত খিঁচিয়েছি । ‘জবাব দিচ্ছনা যে, এতো রাগ!’ ‘আচ্ছা
আমি নাহয় মাফ চাইছি হোল তো?’ এযে মেঘ না চাইতেই জল! শেষ কবে কেউ এমন মিষ্টি করে আমার
রাগ ভাঙিয়েছে মনেই পরে না (বাড়িতে বাকিদের মানভঞ্জনের মনপলি আমারই কিনা) । ভাবছি
জবাবে কি লিখি, এরমধ্যেই আরেকটা মেসেজ, ‘নীপা প্লিজ কিছু বল’ । যাক এতক্ষণে সব
ফরসা হোল, মেসেজ গুলো নীপা নাম্নী এক সৌভাগ্যবতীর; মানে যার রাগ অন্ততঃ একজনের
কাছেও ভারি দামী । বেচারি প্রেমিকের জন্যে প্রাণটা কেমন হুহু করে উঠল, জবাবে
লিখলাম, ‘আমি তো নীপা নই, আপনার বোধহয় কিছু ভুল হয়েছে’ । ‘ভুল তো হোয়েছেই, আর সেতো আমি স্মীকার করছি,
তাবোলে আমাকে এড়াতে বলে দিলে তুমি নীপা নও!’ ‘না না বিশ্বাস করুন আমি সত্যি নীপা
নই, নীপা নামের কাউকে চিনিও না’ । ‘নীপা তুমি যদি বারবার এরকম বল আমি কিন্তু ঠিক
একটা কিছু করে বসবো!’ আমি আতঁকে উঠি, শেষে কি আত্মহত্যার প্ররোচনায় জেলে যাবো!
মেসেজের অভিমানী হুমকি সমানে চলছে; অনেক ভেবে মেসেজ করলাম, ‘বেশ তবে আমাদের বাড়িতে
এসে যা বলার বল, আমি শুনবো’ । ভাবলাম, মোবাইল নম্বর ভুল হয়েছে বলে বাড়ির নম্বর তো
আর ভুল হবে না, ফলে সমস্যা মিটবে । ‘নীপা সত্যি বাড়িতে ডাকছ? কোন গোলমাল হবে না
তো?’ ‘না না গোলমাল কিসের, তুমি বাড়ির সামনে এসে একটু দাঁড়াও, ঠিক একটা ব্যবস্থা
হবে’ আমি স্বান্তনা দিই । ‘বেশ তবে আসছি, ঠিক দশ মিনিটে বারান্দায় এসো আমায় দেখতে
পাবে’ ।
খানিক পরে আবার মেসেজের গুঁতো, ‘কি হোল, বারান্দায়
এসো, দেখ তোমার পছন্দের লাল টিশার্টটা পরেছি’ । এবার আর জবাব দিলাম না । সবে বিকেলের চা টা নিয়ে বসেছি, বাইরে থেকে
ক্রিকেট বল এসে পরল বসার ঘরে; আজকাল এই এক জ্বালাতন পাড়ার হবু শচিন দের নিয়ে । রাগ
করে বলটা বাইরে ফেলতে বারান্দায় গিয়ে আমি থ; লাল টিশার্ট পরা এক রোমিও জুলুজুলু
চোখে চেয়ে আছে আমাদের বিল্ডিঙের দিকে । তেল সাবান না জোটা লম্বা চুল, গালে খোঁচা
দাড়ি বছর পঁচিশের এক ছোকরা; আগে কোনদিন দেখেছি বলে মনে পরে না । কি বিপদ, শেষে
মেসেজগুলো কি আমাকেই করেছিল নাকি? আমার সন্দীপা নামটাকেই ছোটো করে নীপা; মাথা একেবারে
ঝিম ঝিম, ভেতরে এসে সোফায় বসলাম কোনমতে । প্রেম অন্ধ একথা অনস্বীকার্য, তাবোলে
দেড়া বয়সের এক খিটকেল মহিলা! ছোকরার পছন্দের মাথামুণ্ডু পেলামনা, এদিকে চা জুড়িয়ে
ঠাণ্ডা । এরমধ্যে বেলটা বেজে উঠল, কি জানি ছোঁড়ার এতো সাহস শেষে ফ্ল্যাটে হানা!
ভয়ে ভয়ে দরজা খুলে দেখি বীথি, হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম । বীথি আমাদের নীচের
ফ্ল্যাটে থাকে, মাস কমুনিকেসনে মাস্টার্স করছে, ভারি মিষ্টি মেয়ে; বউদি বলে ডাকে,
মাঝে মাঝে গল্প করতে আসে আমার সাথে । সকালে ও আমার একটা শাড়ী নিয়েছিল, কলেজের কোন অনুষ্ঠানে
পরবে বলে, বুঝলাম ফেরত দিতে এসেছে, ‘এতো তাড়া কিছু ছিলনা বীথি’ আমি ভদ্রতা করি ।
‘তাড়া ছিল বইকি বউদি, দাদার ফোনটা আসায় দৌড়ে এলাম ফেরত দিতে’ । মাথাটা গুলিয়ে
গেলো, ওকে ভেতরে আসতে বলে বসে পরলাম । ‘দাদা ফোন করে শাড়ী ফেরত দিতে বলল’? ‘ধ্যাৎ,
কিযে বল; শাড়ী নয় এটা ফেরত দিতে এসেছি’ ও নিজের মোবাইলটা এগিয়ে দিলো । ‘মানে?’ আমি
হতচকিত । আরে সকালে গল্পের চোটে ভুলে তোমারটা নিয়ে গেছিলাম, এখন দাদার ফোনটা পেয়ে
বুঝতে পারলাম’ । আমাদের দুজনের মোবাইলের মডেল এক, অতঃপর......... এতক্ষণে ঘাম দিয়ে
জ্বর ছাড়ল । ‘আমারও তোমাকে কিছু ফেরত দেবার আছে নীপবীথি’ । ‘কি?’ ‘সেটা বারান্দায় গিয়ে দেখ
নীপা’ আমি হেসে বলি ।
***
Published in Prothom Alo on 21st March, 2016
besh mojar situation ..........darun likhechen ...... anek din por apnar blog-e elam......... lekha gulo pore khub bhalo laglo .............
উত্তরমুছুনআপনাকে অনেক ধন্যবাদ Sarasij....
উত্তরমুছুনDaroon
উত্তরমুছুনসত্য কাহিনী হোক বা নিছক গল্প....চমৎকার...একনি:শ্বাসের পড়ার মতো...
উত্তরমুছুন