আমার ঢাকার বাড়ির বারান্দায় আলো আঁধারির
ছায়া ফেলে ঝুঁকে আছে যে গাছটি,
বহুকালের চেনা বন্ধুর মতই তার উপস্থিতি
, আমার এই তিনবছর ব্যাপী প্রবাস জীবনে;
নাম জানতে চাইনি কখনও, নামে কি বা আসে
যায়?
গ্রীষ্মের দখিনা বাতাসে তার পাতায়
ঢেউ, আমাকে ছুঁয়ে যায় আলতো আলিঙ্গনে,
বাদলা দিনের একলা দুপুরে সিক্ত
পরশে সে জানায়, ‘পাশেই আছি’,
মন উঁচাটন বসন্তদিনে ডালপালা
দুলিয়ে হাতছানি দেয় পরম আদরে।
আজ যাবার দিনে, তার চিকণ পাতার নরম
সবুজে রয়ে যাবে আমারও একটু খানি,
ছাড়তে চাইলেই ছাড়া কি যায়?
গাছের ডালে, বারান্দার কার্নিশে নিত্য
তার আনাগোনা, গলায় সাদা দাগ,
গল্পপ্রিয়, প্রতিক্রিয়াশীল এক
বাঙ্গালিনী কাক;
আমার মত সেও একটি মেয়ের মা,
মাতৃত্বের অনেক কিছু শিখেছি তার কাছে।
ছটফটে, চটপটে একজোড়া বুলবুলি,
দূপুরের লেখালেখির মগ্নতার মাঝে,
পড়ার ঘরের কাঁচে, ঠোকর দিয়ে জানান
দেয় গোপন অভিমানে,
আমারও আছি সাথে।
লক্ষ্মীমন্ত বেনেবউ কাঁচা হলুদ গা,
হালকা পায়ে উড়ে বেড়ায় এডালে, ওডালে,
হোল না তো কমদিন, তবু আমার মুগ্ধতা
আজও সেই প্রথম দিনের মতই।
চলে যেতে হবে সবাইকে ছেড়ে, তবু
নিঃসঙ্গ দিনে আলো ছায়ার আঁকিবুঁকিতে, রয়ে যাব আমি;
ছাড়তে চাইলেই ছাড়া কি যায়?
চায়ের কাপ হাতে জানলায় বসলেই, দেখা
যায় শ্যামলিমা ঘেরা বারিধারা ঝিল,
তার গহন গভীর জলে ডুব দিয়ে, কুড়িয়ে
আনতে সাধ হয় জমে থাকা বহূযুগের কথা;
উজ্বল দিনে সোনা চিকচিকে ঢেউয়ে,
পাল তোলে আমার সুদূর পিয়াসী মন।
ধ্যানগম্ভীর পূবের দিগন্তের গেরুয়া,
ছুঁয়ে যায় আমার অন্তঃস্থল প্রতিদিন;
গোধূলির কোনে দেখা আলোয় দূরন্ত
পশ্চিমী ক্যানভাস –
ধরে রাখি মনের লেন্সে ক্লান্তিহীন
মুগ্ধতায়।
আমি চলে যাব; তবু ঝিলের ঢেউ
ছন্দহীন হবে না, সূর্যাস্তের রঙে আঁকা হবে নতুন কাহিনী;
শুধু আমার নিঃশ্বাস বাস্প, ভোরের
শিশির হয়ে মূর্ত হবে জানলার কাঁচে;
ছাড়তে চাইলেই ছাড়া কি যায়?
***
©1917 ananyapal ALL RIGHTS RESERVED
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন