মঙ্গলবার, ১৩ জুন, ২০১৭

আষাঢ়স্য প্রথমদিবসে

খোলা বাতায়ন পথে দখিণা বাতাস বয়ে আনে স্নিগ্ধ পরশ তন্দ্রাতুর অলস মধ্যাহ্নে,
নুয়েপড়া বৃক্ষশাখে রাঙা কিংশুক গুচ্ছ দোলে, সলজ্জ হরষে;
বুঝিবা বলতে চায় কিছু।
উদ্যান মাঝে যত্নে বাঁধানো পুষ্করিণী, শ্বেতপদ্ম ফুটে আছে তার নীল জলে,
বকুল বৃক্ষের ছায়াঘন প্রস্তর বেদিকা, ঝরা বকুলের সমারোহ সেথা,
যুথি,জাতি, মল্লিকা কুন্দফুলে উপবন, নন্দনকানন;
বাতাস মদির পুষ্প সৌরভে।

একাকী পুরুষ রয়েছেন বসে গবাক্ষ পাশে, অতিশয় কান্তিমান,
তপ্ত কাঞ্চন বর্ণ, দীর্ঘ, ঋজু দেহ, দেবতুল্য মুখশ্রী,
চোখদুটি কোমল, ভাবময়, না জানি বিভোর কোন মধুর কল্প লোকে,
উন্মুক্ত কাঁধে দৃশ্যমান উপবীত, কুঞ্চিত কেশদামে বাতাসের মৃদুস্পর্শ;
সম্মুখে রয়েছে সুসজ্জিত কাঠের পীঠিকা, সম্বৃদ্ধ লেখার সরঞ্জামে,
যুথীমাল্য ঘিরে আছে মসীধার, সুগন্ধী ধূপ জ্বলে কুলুঙ্গীতে,
তালপত্রে লিখে চলেছেন কিছু নিবিষ্ট আগ্রহে, বিদগ্ধ পুরুষ।

ক্ষণপরে থেমে যায় লেখনী,মুখ তুলে চান যুবা অন্যমনে,
দুচোখের ভাষায় অজ্ঞাত তৃষ্ণা, নীরব অভিব্যক্তি বেদনাবিধূর,
মধুময় দ্বিপ্রহরে, বসে থাকেন কবি, নিঃসঙ্গ মূরতি।
রামগিরি পর্বতে রাম-সীতার মিলন আশ্রমে, অভিশপ্ত যক্ষ,
কাটাবে দীর্ঘ বিরহকাল,
প্রণয় মাধুর্যের স্মৃতি নিষ্ঠুর দংশনে দংশাবে তিলে তিলে;
তাই কি মলিন কবির সুকুমার মুখ?
বিরহ কি শুধুই যক্ষের!
কৈলাস পর্বতে ফেলে আসা প্রেয়সী, সে কি শুধুই কল্পনা!

সিক্ত বাতাসের দমকে, শিহরণ জাগে, চোখ যায় বহির্পানে,
মধ্যাহ্নের প্রখর সূর্য উত্তাপহীন, যেন কোন জাদুমন্ত্রবলে;
উম্নুখ কেকারবে মুখর কানন।
মুগ্ধ বিস্ময়ে চেয়ে দেখেন কবি, কৃষ্ণমেঘ সবল প্রতাপে ঢেকেছে দিগন্ত,
প্রবল গর্জনে তার অগ্রীম বর্ষণ বার্তা;
দেশ দেশান্তরে বর্ষার ক্লান্তিহীন দূত, বয়ে নিয়ে যাবে আনন্দ সন্দেশ এমনই গৌরবে।
মৃদু হাসি ধরা দেয় ওষ্ঠাধরে, লেখনী সরব হয় তালপত্রে পুনর্বার,
“আষাঢ়স্য প্রথমদিবসে মেঘমাশ্লিষ্টসানুং
বপ্রক্রীড়াপরিণতগজপ্রেক্ষণীয়ং দদর্শ।।“
কবিশ্রেষ্ঠ নিমগ্ন হন কাব্যে তাঁর।

***
©2017 ananyapal ALL RIGHTS RESERVED