শনিবার, ২৭ জুন, ২০১৫

ঘরে ফেরা


স্বপ্নের নগরী ছেড়ে ফিরলাম ঘরে, আজ বেশ কয়েকদিন পরে;
সেখানে সীমাহীন সমুদ্রের নীল, আমার ছাপোষা মনে তুলেছিলো ঢেউ,
নীলিমার কোলজুড়ে সাদা পাহাড়ের ঘেরাটোপ, তারই আড়ালে চাঁদ- সূর্যের লুকোচুরি - সেও যে অনেক দামী।
সাথে ছিলো মায়াবী রূপকথার নরম জোছনা, অতীতের বিস্ময়্কীর্তীর ছড়ানো মানিক অলিতে গলিতে করেছিলো আনমনা।
ফেরার বেলায় বুকের গভীরে একটা হালকা মোচড়, দিয়েছিলো মন খারাপের বার্তা;
দীর্ঘ বিমানযাত্রা ক্লান্তিকর, যেন মোচড়টা বাড়িয়েছিলো আরো।


বিমানবন্দরের হাঁসফেঁশে তদ্বির - ব্যস্ততা পেরিয়ে কোনোক্রমে বাড়িমুখো;
সেখানেও জ্যামের ঠেলাঠেলি, অগ্রগতির পার্শ্বচাপ।

সদর দরজা খুলে লটবহরের হ্যাপা সামলে ঢুকলাম বসার ঘরে,
একটা সোঁদা গন্ধ বয়ে আনলো বদ্ধতার আভাস -
তড়িঘড়ি পর্দা সরাই, খুলে দিই বারান্দার কপাট।

বাইরে ঝিরঝিরে বৃষ্টি, গাছের পাতায় নরম সবুজের সমারোহ,
ঝিলের জল পূর্নগর্ভা বধূ।
চারদিকের ভিজে সতেজতা বড় সহজ, বড় নিজের মনে হয় নিমেষেই।
স্বপ্ন নগরী তুমি থাকবে আমার স্বপ্নে, মধুর লালিমা নিয়ে;
আজ চেনা গন্ডির স্বস্তিতে চলুক আমার ঘরে ফেরার উৎসব।


ঢাকা
২৭শে জুন, ২০১৫


শুক্রবার, ১৯ জুন, ২০১৫

নীলচে বিকেল


ধুসর মেঘের ঘনঘটা ছায়া ফেলেছে ছোট ছোট ঢেউয়ের নীলিমায়,
সময় থেমে গেছে ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপের বাঁধানো সমুদ্রপটে; 
তুমি আমি বসে আছি নির্জন বেঞ্চে, সামনে দীগন্তে সমুদ্র ও আকাশ পথ হারা।

প্রাক-সন্ধ্যের মায়াবী বিকেল, আকাশের ধুসরতা আর সমুদ্রের নীলিমায় অদ্ভুত নীলচে।
সময়ের হিসেব হারিয়ে হিসেবী মন আজ ভাষা হারা,
তবু কত কথা বলা হয়ে যায় - 
যা ছিলো না-বলা এতোকাল।

ধীরে ধীরে মেঘের দেয়াল চিড়ে নেমে আসে আলোর ঝর্ণা, মহাকালের আশীর্ব্বাদ নিয়ে;
সেই স্বর্গীয় আভায় নতুন করে তোমাকে দেখি, 
যে দেখা হয়েছ্লি শেষ বহুকাল আগে সময়ের দৌড়ে।

তবে কি ছিলাম অপেক্ষায় এমনি এক নীলচে বিকেলের,
যে রেখে যাবে বসন্তের ছাপ খর গ্রীষ্মের দিনে?


***

ন্যাপফ্লিও, গ্রীস
১৮ ই জুন, ২০১৫

রবিবার, ১৪ জুন, ২০১৫

চেনা অচেনা

গনগনে দুপুর মাথায় করে মাল্টিপ্লেক্সের দোরগোরায় কজন ভারিক্কি মহিলা;
লোকে বলবে কটা আধবুড়ি বাড়ি পালিয়ে জুটেছে,
তবে তারা নিজে বলে হাঁসফাঁশে রোজের রুটিনে একটু আরামের নিঃশ্বাস.…
দেখোতো চিনতে পারো কি?


চেহারাগুলো মানি বেশ খানিকটা পাল্টেছে, এসেছে বয়সের মার্জিত প্রসন্নতা;
চুলের ধুসরতা জানান দেয় দায়িত্ববোধের,
চোখের কোনায় কাকের পায়ের ছাপ, সে তো দীর্ঘ সংসার জীবনের বাড়তি পাওনা।


প্রথমে খানিক হাল্কা গল্প গুজব, তার সাথে ছবি তোলা,
তারপরে চলে ভালো থাকার হিসেব নিকেশ।
সময়ের কাঁটা যত এগোয় হাসি চওড়া হয় প্রসন্ন মুখ্গুলোতে;
চোখের দৃষ্টিতে ঝিলিক দেয় প্রায় ভুলে যাওয়া দুষ্টুমি,
ছোটবেলার গল্পে সময় হিসেব হারায়।
বাইরে নেমেছে বাঁধভাঙ্গা বৃষ্টি, তার সুরে বর্ষার আগমনী;
'ভিজবি?' ইশারায় কথা হয়;
ছুপছুপ শব্দ তুলে থৈ থৈ জলে দৌড়ে যায় ওই ওরা.…
এখন চেনা যায় কি দুবেনী ঝোলানো এক ঝাঁক কিশোরীকে?


***






শনিবার, ১৩ জুন, ২০১৫

প্রতিবিম্ব

এয়ারপোর্ট লাউন্জের সোফায় গা এলিয়ে অপেক্ষা,
সামনে ধোঁয়া ওঠা কফির কাপ;
অপেক্ষার মুহুর্ত্তগুলো অধীরতায় দীর্ঘ তবু, আরামের উষ্ণতায় মোড়া।

ভ্রমণের উৎসুক রোমাঞ্চে গা ঘেঁসে বসা আমার কিশোরী মেয়ে;
কৃত্রিম শীতলতার মাঝে তার গায়ের ওম ছুঁয়ে থাকে আমায় এক নামহীন পরিপূর্ণতায়।


সময় হয়ে এসেছে উড়ানের, তাই তড়িঘড়ি একবার টয়লেট ঘুরে আসা -
সকন্যা এগোই ।

'মেয়ে আপনার?' আয়নায় নিজেকে মেপে নিতে নিতে আলগোছে দেখে নিই প্রশ্নকত্রী সাফাই কর্মীনিকে।
দায়সারা সম্মতি জানিয়ে তাড়া দিই মেয়েকে;

'ভারি সুন্দর, মাশাল্লাহ্ִ; সুখী হোক ' -
এবারে ভালো করে তাকাই খাকি পোশাকের মধ্যবয়সী মহিলার দিকে।

নামহীন চরিত্রের আকস্মিক বাচালতায় জাগে অনভ্যস্ত বিস্ময়।
'আমারো একটা মেয়ে, এবার স্কুল বোর্ডে ভালো রেজাল্ট করেছে',
শ্যামলা মুখ খুশিতে উজ্জ্বল।
শুনে সৌজন্যের বাঁধা বুলি আওড়াই দরজার দিকে পা বাড়িয়ে।

'মেয়েটাকে কোনোদিন কাছে পাইনি জানেন, সেই দেড় বছর বয়স থেকেই কোলছাড়া, থাকে দেশের বাড়িতে;
স্বামী চলে গেলেন অ্যাক্সিডেন্টে,  কি করি বলুন চাকরী করতে আসতে হোল শহরে;
মা মেয়ে একসাথে দেখলে তাই বড় ভাল লাগে'।


নিজের অজান্তেই ঘুরে দাঁড়াই; স্নেহাতুর নরম মুখে দুখানি ভিজে চোখ লবনাক্ত করে আমার ঠোঁট, জিভ;
এক অব্যক্ত মোচড়ে বুঁজে আসে গলা।

চলতি পথের এক নামহীনা চরিত্রে খুঁজে পাই আমার মাতৃহৃদয়ের প্রতিবিম্ব।


***