শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ম্যাসাজ মহিমা

ব্যাংককে থাকতে যাচ্ছি জানালে প্রথমেই যে কথাটা সবাই বলে ওঠে, তা হোল ‘আরে ম্যাসাজের জায়গা, খুব ভালো’, শুনে শুনে মনে হতে লাগলো যেন ওদেশে কাজকর্ম শিকেয় তুলে, খালি ম্যাসাজ করালেই চলে। অবশেষে একদিন সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্টে পৌঁছানো গেলো, দেখি ভাষা না বোঝা গেলেও লোকজন খুবই কর্মনিপুণ; চটপট ইমিগ্রেশান, লাগেজ পেরিয়ে এগোতেই চোখে পড়ল সারথী হাজির হাতে প্ল্যাকার্ড ও মুখে হাসি নিয়ে। গাড়ীতে উঠতে, আধো আধো ইংরেজী বুলিতে সে জানিয়ে দিলো গাড়ীর সিটে ম্যাসাজের ব্যবস্থা আছে; আমি চমৎকৃত, এ  যে সত্যিই ম্যাসাজের দেশ! কদিন নানান কাজের ব্যাস্ততা পেরিয়ে এক রোববারের সকালে কর্তা বললেন, চলো ম্যাসাজ করাতে যাই আজ। রাস্তার মোড়ে মোড়ে পান বিড়ির দোকানের মত সারি সারি ম্যাসাজ সেন্টার সুকুম্ভিতে (আমরা ওখানেই থাকি), যা হোক, তাও কাছেই একটা বড় সেন্টার আসতে যেতে চোখে পড়ে, বললাম ওটাতেই যাই চলোসেন্টারের রিসেপশনে বসা মহিলা মিষ্টি হেসে প্রায় এনসাইক্লোপেডিয়ার মত গোবদা একটা রংচঙে বই ধরিয়ে দিলেন, পড়াশোনা করতে হবে ভেবে ঘাবড়ে যাচ্ছি, পাতা খুলে বুঝলাম এ হোল ম্যাসাজনামা। খুঁজে পেতে তার ভেতর থেকে একটা কাঁধের ম্যাসাজ পছন্দ করলাম (আমার একটি কাঁধ বেশ কিছুদিন ধরেই জমাটবদ্ধ), কর্তা নিলেন সনাতনী ম্যাসাজদুজনকে একসাথে নিয়ে গেলো একটা কেবিনে, সেখানেও হাসি মুখে দুই মহিলা কাপড় বদলে শুয়ে পড়তে বললেন। আমার তো কাঁধ, শুতে হবে কেনো ভাবছি, ভাষার বিভ্রাটে জিগ্যেস করার উপায় কোথায়! ঝামেলায় না গিয়ে শুয়ে পড়তেই,যা শুরু হোল তার সাথে ধোবিঘাটের কাপড় নিঙরানোরই কেবল তুলনা করা চলে; না আর একটা তুলোনাও খাটে। বাবা রামদেব টিভি চ্যানেলে স্বেচ্ছায় যেসব শরীরী মারপ্যাঁচ করে থাকেন, আমাদের নিতান্ত অনিচ্ছুক হাত পা গুলোকে নিয়ে ঠিক সেসবই করা হতে থাকলো; তবে হ্যাঁ মহিলাদ্বয়ের মুখের অমায়িক হাসিটুকু কিন্তু লেগেই ছিল সর্বক্ষণ। ঘন্টা খানেক ধরে চলল এই কোস্তাকুস্তি, আমার তখন মুখ দিয়ে আওয়াজ বের করারও ক্ষমতা নেই, হাত পা গুলো আর নিজের বলে ভাবতে পারছি না। অবশেষে গরম সেঁক (মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা টাইপ) দিয়ে শেষ হোল ম্যাসাজ। কম্পমান কলেবরে রিসেপশনে ফিরতে ধরিয়ে দেয়া হোল ভেষজ চা। মিথ্যে বলব না, চা টা খেয়ে বেশ ফুরফুরে লগলো, সেন্টার থেকে বেরিয়ে হাঁটতে গিয়ে দেখি শরীরটাও লাগছে ভারি ঝরঝরে। ঘরে ফিরে কর্তা বললেন, ‘আবার যাবে তো?’ আবার যাবার সাহস হবে কিনা জানিনা, তবে শ্যামদেশীয় (থাইল্যান্ড) আড়ং ধোলাইয়ের যে মহিমা আছে সেকথা স্বীকার করতেই হোল।


***

©1917 ananyapal ALL RIGHTS RESERVED