বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪

বাহারে সমুদ্র বিহার

মেয়ের বিদেশী স্কুলে ক্রিস্টমাসের লম্বা ছুটি, বিদেশী বন্ধুরাও সব স্বদেশমুখী; অতএব ঢাকায় তার মন চঞ্চল। বললাম ‘আমরাও তো কোলকাতা যাবো, ছুটি বেশ কাটবে’, মেয়ে তার ওঁচানো নাক আরও উঁচিয়ে বলল ‘সেটা আবার বেড়ানো হোল? বন্ধুরা সব গেছে কোরিয়া, আফ্রিকা, আমেরিকা - আর আমি আধ ঘণ্টার রাস্তা কোলকাতা?’ কি বিপদ, তা বাঙালি হয়ে যখন জন্মেছ, হোম ভিসিট তো গুয়াটেমালা কিম্বা হনলুলুতে হবে না; তা সে কথা কে বোঝে! শেষমেশ বাবারূপী স্যান্টা উদ্ধারে নামলেন, ব্যাবস্থা হোল স্টার ক্রুসে সমুদ্রবিহারের সিঙ্গাপুর থেকে।

যাবার দিন, মাত্র ছঘন্টা লেট বিমান-বাংলাদেশে ‘চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে’ আবহ সঙ্গীত এবং বিকেল সাড়ে চারটেয় মাংস-ভাত ও পায়েসের মেনু দেখে যুগপৎ পুলকিত ও শিহরিত হলাম (অবশ্য ফেরার সময় সন্ধ্যে ছটাতেও মৌলিকত্ব বজায় রেখে বিরিয়ানি দেওয়া হয়েছিল এবং লোকে ভারি তৃপ্তি সহকারে তা খেয়েছিল)।
পরদিন সকালে হারবারফ্রন্ট জাহাজঘাটায় পৌঁছে মনে হোল যেকোনো আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট টার্মিনালকে লজ্জা দেবে। আমরা একটু আগেভাগেই পৌঁছেছিলাম, যাতে হুড়োহুড়ি না করতে হয়; পৌঁছে দেখলাম জনসমুদ্রের ঢল, কারন প্রায় ষাট শতাংশ যাত্রীই আমার মত ব্যাস্তবাগিশ ভারতীয়। যাত্রীরা ভারতীয় হলেও, কর্মকর্তারা কর্মঠ সিঙ্গাপুরি, তাই নিয়মের বেড়াজাল ডিঙিয়ে জাহাজে চড়তে বিশেষ বেগ পেতে হোল না । এতদিন ওসান লাইনার বইয়ে পড়েছি, আর টাইটানিক সিনেমাতে দেখেছি, এক আধবার সমুদ্র বক্ষে দূর থেকেও দেখেছি; এবার ভেতরে গিয়ে সত্যি চমক লাগার পালা, এতই সুন্দর আর বিলাসবহূল ব্যাবস্থা। প্রাইভেট ডেক অর্থাৎ ব্যালকনি সহ আমাদের কেবিনটা যেন সাজানো একটা পুতুল ঘর, আর তার সাথের স্নানঘর আরও মজার, ছোট্ট একটু জায়গার মধ্যে সবরকম সুবিধে কেমন কায়দা করে আঁটান হয়েছে না দেখলে বিশ্বাস করা শক্ত।

অর্ণব পোত
এতো নয় খেলাঘর

বারোতলা জাহাজের বিভিন্ন তলায় চেয়ার পাতা মনরম ডেক, অসংখ্য সুইমিং পুল, রেস্তরাঁ, ক্যাসিনো এবং চমকপ্রদ সব বিনোদনের বন্দোবস্ত। যাইহোক, জাহাজ পরিদর্শন শেষে ভরপেট চৈনিক আহার সেরে এগার তলার ডেক এ চেয়ারে লম্বা হলাম; ফুরফুরে হাওয়া, সামনে আ-দিগন্ত সমুদ্র, আর একটু দূরে ছোটো পুলে কয়েকটা চীনে বাচ্চার হুটোপুটি - দেখতে দেখতে কখন চোখ লেগে এসেছে বুঝতেই পারিনি। হঠাৎ একটা বাঁশফাটা চিৎকারে কলজে লাফিয়ে উঠল, আর তার সাথেই শুনতে পেলাম ঢাকের গুরু গর্জন। ব্যাপারটা ভালো করে ঠাহর করতে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি, তখনি চোখে পরল পুলের সামনে একটা ছোটো খাটো জটলা; আর সেই জটলার মধ্যমণি এক চীনে মহিলা এবং তাঁর এক দেশোয়ালি ষণ্ডা জোয়ান। নিঃসন্দেহে, শব্দ তরঙ্গের যুগলবন্দী এঁদেরই অবদান; তবে ব্যাপারটা বেশীক্ষন শুধু শব্দযুদ্ধেই থেমে রইলো না, অচিরেই পুরুষটি গলাবাজিতে পিছু হটে ঘুসি পাকাতে শুরু করল, লক্ষ অবশ্যই চিনে বিরাঙ্গনা। মহিলা তাতে দমবার নন, তাঁর কর্ণভেদী তারানা আমাদের সাথে সাথে প্রতিপক্ষ পুরুষটিকেও পর্যুদস্ত করে দিচ্ছিল। বুঝলাম জেন্ডার ইকুয়ালিটিতে চীনেরা আমাদের থেকে ঢের এগিয়ে। এবারে কৌতূহল দমন করতে না পেরে একটু খোঁজ করে মালুম হোল এঁরা পুলের খেলুড়ে দুটো বাচ্চার যথাক্রমে মা ও বাবা। বাচ্চা দুটি খেলতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে কিছু নিয়ে ঝগড়া শুরু করে এবং মৌখিক ঝগড়ায় সুবিধে করতে না পেরে মহিলার ছেলে তার ফ্লোটারটা অন্যজনের মাথায় ভাঙে, তারই ফলে এই কুরুক্ষেত্র । যাহোক, খানিক বাদে জাহাজকর্মীদের হস্তক্ষেপে মিটমাট হোল, মহিলা অপরপক্ষের শাসানি উপেক্ষা করে ভাঙা ফ্লোটার হাতে দুর্ধর্ষ ছেলেকে নিয়ে ডেক দাপিয়ে চলে গেলেন, পিছু পিছু যাওয়া নিরীহ জীবটিকে দেখে বুঝলাম মহিলার স্বামী যাকে এতক্ষন চোখে পরেনি। বাঙালি স্বামীদেরই শুধু স্ত্রৈণ অপবাদ দেওয়া নিতান্ত অন্যায় সন্দেহ রইলো না।  

ডেক থেকে তোলা

জলকেলি

জাহাজের ডেক
রেস্তোরাঁ
ভারতীয় যাত্রিরা প্রধানত দুধরনের, একাংশ অবশ্যই মধুচন্দ্রিমা যাপনে ক্রুজে, তাদের মধ্যে উত্তর পশ্চিম ভারতের আধিক্য; আর একটা বড় অংশ গুজরাতি, যারা বাবা-মা, ছেলে-বউ, নাতিনাতনি সহ পরিবারকেন্দ্রিক ভ্রমনে এসেছেন। এক্ষেত্রে যে জিনিসটা সবচেয়ে লক্ষ করার মত, তা হোল বয়স, চেহারা ও আয়তন নির্বিশেষে খাটো পশ্চিমি পোশাকের চূড়ান্ত সমারোহ। এব্যাপারে, তন্বী নববধূ এবং মেদবতী আন্টি সব একাকার এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একের সাথে অন্যের পোশাকের ভীষণ মিল, যা দেখে অনেকবার একথাও মনে হচ্ছিলো যে পোশাকগুলো সম্ভবতঃ একই দোকানের। তা ডেক এ বসে মহিলাদের খাটো পোশাকের র‍্যাম্প ওয়াক দেখতে মন্দ লাগছিল না, যদিও তার মাঝে দু একটা ছোটোখাটো দুর্ঘটনা ঘটেছে। সে প্রসঙ্গে যাবার আগে একটা কথা বলে রাখি, ভারতীয় যাত্রীরা ডেক এ বসে সময় নষ্ট না করে সকাল থেকে রাত সুইমিং পুল, জাকুসি এবং ফ্রী রেস্তোরাঁতেই ভীড় করতেন। এবার আসা যাক দুর্ঘটনার কথায়। মাঝ সমুদ্রে প্রাক-সন্ধ্যায়, বারোতলার ডেক এ দুরন্ত হাওয়া, আমি যথারীতি ডেক চেয়ারে আধশোয়া; একটু দূরে রেলিং ঘেঁসে দাঁড়িয়ে নানান ভঙ্গিমায় ছবি তুলছে এক নবদম্পতি। আমার মত, কিছু দূরে খোলা রেস্তরাঁয় বসা এক মধ্যবয়সী দম্পতিও ওদের লক্ষ করছিলেন; কিছু পরে দেখি ভাবিজি উঠে গিয়ে দাড়ালেন রেলিং ধরে, ক্যামেরা তাক হতেই এক অভাবনীয় মুহূর্ত – ভাবীর ফ্রক উড়ে একেবারে মরিলিন মুনরো, তফাতটা শুধু আয়তনে। জাহাজের প্রতিটি ডেক এর চার কোনায় একটা করে জাকুসি সকাল থেকে রাত চালু থাকতো এবং যথারীতি এর প্রত্যেকটিই বেশিরভাগ সময় থাকতো ভারতীয়দের কবলে। দুপুর নাগাদ সেরকম একটি জাকুসি থেকে এক প্রায় বৃদ্ধা দশাসই আন্টি বেরিয়ে এলেন, উদ্দেশ্য ডেক এর অন্য প্রান্তে চেঞ্জিং রুমে যাওয়া। সুইমিং কস্টিউমে অনভ্যস্ত আন্টি দুটি তোয়ালে দিয়ে সর্বাঙ্গ ঢেকে চলেছেন ব্যাস্ত পায়ে, মাঝ বরাবর পৌঁছে হঠাৎ নিম্নাঙ্গের তোয়ালেটি গেলো খুলে; এর পরের দৃশ্য বর্ণনা করার দুঃসাহস আমার নেই।    

এবার আসি জাহাজের বিভিন্ন বিনোদন মূলক অনুষ্ঠানের কথায় (আমার অবশ্য ডেক এ বসেও বিনোদনের অভাব হয় নি)। আন্তর্জাতিক জাহাজের বিনোদনও সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক ও পক্ষপাত বর্জিত, সেখানে কোরিয়ান কমেডি, ব্রাজিলিয়ান নাচ থেকে বলিউড নাইট কিছুই বাদ যায় নি। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল জাহাজের ক্রু মেম্বারদের একটি অনুষ্ঠান, সেখানে হিন্দি গান, ব্যালে নাচ, হিপ হপ এমনকি জাগলারি শো দেখে এরা যে পেশাদার নয় ভাবতে অসুবিধা হচ্ছিলো। চারটি চিনে মেয়ে ভারি সুন্দর একটি চিনে গান গাইতে গাইতে স্টেজে এলো, সুরটা কেমন চেনা চেনা; আমার মেয়ে খুব কোরিয়ান গান শোনে তাই ওকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম ওটা অতিপরিচিত হিন্দি গান ‘ছাঁইয়া ছাঁইয়া’, চিনে উচ্চারণের গুণে যা অমন আন্তর্জাতিক মাত্রা পেয়েছে। অনুষ্ঠানের শেষ আইটেম ছিল তিন ‘ডিভা’ র ইঙ্গিতপূর্ন ফ্যাশন ওয়াক, আমাদের আইটেম গার্লরা যার কাছে নেহাতই জোলো। পরদিন সকালে ব্রেকফাস্টে রেস্তোরাঁর একটি ওয়েট্রসের কাছে অনুষ্ঠানের প্রশংসা করায় সে একটি ওয়েটার ছেলেকে এনে হাজির করল, ‘তুমি কিসে ছিলে?’ জিজ্ঞাসা করায় ছেলেটি লাজুক হেসে জানালো সে ওই তিন সুন্দরীর একজন। বলাই বাহুল্য এরপর আমি বাকশক্তি রোহিত।  

বলিউডেও আছি
চীনে 'ছাঁইয়া ছাঁইয়া'

সফর শেষে জাহাজ থেকে নামার সময় মনে হোল একটা মনকেমন করা অনুভুতি এই বিশাল ক্রুজের কোন ও এক কোনায় ফেলে এলাম, আর তার বদলে সঙ্গে নিয়ে এলাম একরাশ বিস্ময়, ভাললাগা আর কিছু অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।


***

শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৪

হাসতে নেই মানা......


হাসতে নেই মানা......                   

মে মাসের প্রথম সপ্তাহ, পচা গরমে শরীর হাঁসফাঁস । অভিজাত স্কুলের গাছপালা ঘেরা খোলামেলা বিল্ডিং তাই রক্ষে; তবে গরমের ছুটির আর মোটে দিন দুয়েক অপেক্ষা তার পর আর পায় কে! টেনের ক্লাসরুমে বসে একমনে পেন্সিল চিবুতে চিবুতে সে কথাই ভাবছিলাম । সদ্য শেষ হওয়া হাফ ইয়ারলি পরীক্ষার খাতা টাতা বেরচ্ছে তাই বেশ একটা চাপা উত্তেজনা, আমি অবশ্য ‘রাগ দুঃখ ভয় তিন থাকতে নয়’ গোছের দর্শনে বিশ্বাসী তাই আপাততঃ মা টিফিনে কি দিয়েছে সেই নিয়ে গবেশনায় ব্যাস্ত । ইতিহাসের দিদিমণি মিসেস রয় ক্লাসে ঢুকলেন, হাতে যথারীতি উত্তরপত্রের গোছা । ‘এগুলো তোমাদের নয়, তোমরা কাল পাবে’ ব্যক্তিত্বময়ী সদাপ্রসন্না দিদিমনি আজ মনে হোল তেমন প্রসন্ন নন । নিজের জায়গায় বসে গম্ভীর মুখে জানতে চাইলেন ‘X-A র মিতালী বসু কে চেন তোমরা?’ চুপচাপ নিরীহ মিতালী হঠাৎ এত বিখ্যাত কি করে হোল ভাবার চেষ্টা করছি, দিদি নিজেই ব্যাপারটা খোলসা করলেন । ‘একটু আগে মিতালীর খাতা চেক্ করছিলাম, তাই ওর সম্বন্ধে আগ্রহ বোধ করছি’ । আমি তো শুনে থ! মিতালী তো জানতাম পড়াশোনায় আমার থেকেও সরেশ, এর আগে আমরা এক সেকশানে পড়েছি; কলিকালে কত কি যে দেখব! ‘তোমাদের এখন মিতালীর খাতা থেকে সম্রাট কনিষ্কের ওপর যে প্রশ্ন ছিল তার উত্তর পড়ে শোনাচ্ছি, মন দিয়ে শুনে বলবে কি বুঝলে’ । উত্তেজনায় এবং খনিক ঈর্ষায় আমার পেটের ভেতর গুড়গুড়, যাই হোক দিদিমণি তাঁর উদ্দাত্ত গলায় শুরু করলেন ।
‘কনিষ্ক অনেক দিক থেকেই আর সব সময়কালীন রাজার থেকে আলাদা ছিলেন এবং তার প্রথম কারণ হল তিনি মুণ্ডহীন ছিলেন । মুণ্ডহীন হওয়া সত্তেও বুদ্ধিতে ও পরাক্রমে অন্য মুন্ডওয়ালা রাজাদের থেকে কোনও অংশে কম ছিলেন না । যুদ্ধক্ষেত্রে যখন শত্রু তাঁকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলত, বিনা মুণ্ডেও তিনি অর্জুনের মতই লক্ষভেদ করতে পারতেন । শুধু তাই নয় মুণ্ডহীনতা সত্তেও তিনি সঙ্গীত ও সাহিত্যের অনুরাগী ছিলেন । শুধু একটা বিষয়েই তাঁর বিশেষ অসুবিধে ছিল, মুণ্ড না থাকায় সম্রাটের মুকুট মাথায় পরার সুবিধে ছিল না, তবে মনে হয় সেটা তিনি কোমরবন্ধে ঝুলিয়ে কাজ চালিয়ে নিতেন’  -
বাকিটা শোনার মত অবস্থা তখন ক্লাসের কোনও মেয়েরই আর নেই, উদ্বেলিত হাসি চাপার অসীম চেষ্টায় সকলের মুখ লাল । আমি মনে মনে ক্ষনজন্মা মিতালী কে স্যালুট না জানিয়ে পারলাম না । শুধু দিদিমনির মুখে থমথমে গাম্ভীর্য, ‘এটা কি আমাকে অপমানের চেষ্টা?’ উনি দেখলাম ব্যাপারটা ব্যাক্তিগত পর্যায়ে নিয়ে গেছেন । নিরীহ, ল্যাকপ্যাকে মিতালীকে আর যাই হোক ঠিক অপমানকারিনী হিসেবে ভাবতে পারলাম না ।
***
প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি, সম্রাট কনিষ্কের একটি মাত্র প্রতিকৃতি মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেছে, সেটি কালের প্রবাহে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মুণ্ডহীন ছিল । ফলে ইতিহাসের বইয়ে তাঁর যে ছবি পাওয়া যায়, সেটি সেই মুণ্ডহীন ধরের প্রতিকৃতি । 

Publishied in Prothom Alo on 11th December, 2015

মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৪

অপরূপা

সেদিন পড়ন্ত বিকেলের কনে দেখা আলোয়
প্রথম তেমন করে দেখেছিলাম তোমায়,
ধীর পায়ে ঘরমুখো একাকিনী;
ললিত ছন্দে সুরেলা কোন ও সন্ধ্যা রাগিনী ।

ইশৎ হেলে থাকা এলোখোঁপা, সরু মফচেন, হাল্কা রঙের শাড়ী;
দিঘীর স্নিগ্ধতা মাখা চোখ, ফর্সা গাল ছুঁয়ে আছে ঝুরো চুল দলছুট, আনাড়ী ।

গোধূলী বেলার নিবিড় অস্তরাগে,
আমার হৃদয়ে বেহাগের সুর বেজেছিল নীরবে ।

আজ ও বসন্ত আসে,
কৃষ্নচূড়ার রাঙা ফাগ ওড়ে দখিনা বাতাসে;

আজ ও বাঁধভাঙা মন চকিত পলকে উৎসুকে চায় পথের বাঁকে,
গোধূলী আলোর লালিমায় খোঁজে সে এক অপরূপাকে।

বুধবার, ১ অক্টোবর, ২০১৪

কাকচক্ষু

তেজী ঘোড়ার মত মেয়েটি সব কিছুতেই ফার্স্ট;
রেসের পাল্লায় অথবা ক্লাসের পরীক্ষায় –
তার নাগাল পাওয়া শক্ত, হেলায় জেতা যেন এক মুদ্রাদোষ মাত্র ।
যেমন বিতর্কের ধার, তেমনই গানের সুরে মীর ঠাঁট,
বড় অনায়াস, সহজে লালিত।
শিক্ষিকাদের স্নেহে, সহপাঠিনীদের অবাক বিস্ময়ে,
বাবা মা দাদু দিদার নিরব অহঙ্কারে; সে যেন হেমন্তের আকাশপ্রদীপ ।
স্কুলের গণ্ডি, প্রাক্ কলেজের ঘেরাটোপ, ডার্বির কায়দায় রঙিন নিশান উড়িয়ে
সবখানে তারই জয়জয়কার ।

তখন বসন্ত দিন, বাতাসে ভালো লাগার সুর;
কলেজ পড়ুয়া মেয়েটির চলার ছন্দে রূপক, চাহনিতে মায়াবি জোছনা ।
একদিন হঠাৎ খবর এলো তার নেই কোনও খবর, সকালে কলেজ গিয়ে ফেরেনি আর;
চিন্তায় একশেষ বাবা মা, জল্পনার চুড়ান্তে প্রতিবেশী ।
দুদিন পরে ফোন, ‘মা ভালো আছি, বিয়ে করেছি; জামাই তোমার বিদ্বান নয় সামান্য চাকুরে। তবু ভাল আছি, যদি অনুমতি দাও যুগলে বাড়ী আসি’ ।
‘পড়াশোনা ছেড়ে পুতুলখেলার সাধ, এই যদি মনে ছিল; ধরে নেব মেয়ে নেই আমার’ -
মা নয় জবাব দিলেন বাবা ।
স্কুলের বান্ধবী এক নির্জন দুপুরে দেখতে গেলো তাকে,
দেয়ালে নোনা ধরা জলছবি, কপালে ঘামে লেপা সিঁদুর –
‘পড়াশোনা? আর গান?’...... ‘কি হবে ওসবে, বেশ আছি’ ।
‘বেশ থাকা যাবে কি চিরকাল?’ বান্ধবী বিদায় নেয়, চোখে তার জল ।

এরপর কেটে গেছে প্রায় দু-যুগ......
কোনও এক শনিবারের সন্ধ্যে, শপিং মলের অলিতে গলিতে অলস বিচরণ ।
সপ্তাহ ভর অফিস, বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা, সন্তান; তুলনায় সপ্তাহান্ত বড় ফাঁকা;
আর সে ফাঁক ভরাতে এই অভ্যাসের কেনাকাটা ।
‘হিমানী... হিমানী তো?’ গোলগাল এক আটপৌরে গিন্নি এগিয়ে এলেন,
চোখের চাহনিতে একরাশ সঙ্কোচ ।
সাদামাটা ধনেখালি, অজত্নে বাঁধা এলোখোঁপা, সাজ বলতে একটা সিঁদুরের টিপ;
আধুনিকা ঝলমলে হিমানী মেলাতে পারে না পরিচিত গণ্ডীর সাথে ।
‘আপনাকে তো ঠিক...’ কয়েক মিনিটের সংশয়, তারপর দীর্ঘ ফ্লাশব্যাক,
কুড়ি বছরের সফর মুহূর্তেই পার ।
‘তুই!’...... ‘চিনতে পেরেছিস?’ একগাল হাসিতে ঝলসে ওঠে সেই কবেকার দুরন্ত মেয়ে ।
এরপর ফুডকোর্ট, একে অন্যের জীবনের হিসেব দেয়ানেয়া;
ছেলে মেয়ে স্বামীর ভরা সংসারে হারিয়ে গেছে কবেই সেদিনের ডার্বি জেতা ঘোড়া ।
‘ভারি ছিমছাম লাগছে তোকে, সময় বাড়িয়েছে জৌলুস’ মুগ্ধতা ঝরে পরে মেয়েটির কথায়;
বান্ধবীর সাফল্যে তার অবাক বিস্ময় ।
‘এসবই তোর হোত, হয়তো বা আরও বেশী, কেন সরে গেলি?’ হিমানীর স্বরে আর্তি;
‘ক্ষতি কি, বেশ আছি’ মৃদু জবাব, সাথে আধো হাসি ঠিক আগের মতই ।

‘এবার উঠতে হবে রে, কিছু কাজ আছে’ উকিলের সাথে আপয়েন্টমেন্টের কথা ভেবে মসৃণ কপালে বিরক্তির ভাঁজ;
মিউচুয়াল ডিভোর্স, যার আর এক নাম দরকষাকষি, ছুটির দিনে হিমানীর একমাত্র ব্যস্ততা ।
মাথায় পাতলা হয়ে আসা কাঁচাপাকা চুল, নেহাতই ছাপোষা লোকটি হাসিমুখে এসে দাঁড়ায়;
‘আমার স্কুলের বান্ধবী’ - পরিচয় শেষে সলজ্জ সম্ভাষণ ।
তারাভরা আকাশের ঝিকমিকে আলোয় দূরে চলে যাওয়া মেয়েটির দিকে চেয়ে ভাবে, ‘বেশ আছে’; আজ হিমানীর চোখের কোলেও তারার ঝিকমিক।

***


বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

পিরীতি বিষম জ্বালা

প্রেমে পরাটা বাঙ্গালীদের একটা বাতিকের মত, বিভিন্ন বয়সে একেক রকম ভাবে দেখা দেয় । যেমন স্কুলে পরতে ভীতুভীতু প্রেম, আবার কলেজ জীবনে কবিতা লেখার তাগিদে মরীয়া প্রেম। তাছাড়া ধরুন, পাশের বাড়ির নতুন ভাড়াটেদের সুন্দরী মেয়েটিকে দেখে জানলার পাশে ঘাঁই দিয়ে বসে উদাসী প্রেম; অথবা বাস স্ট্যান্ডে রোজ দেখা মেয়েটির পিছু নিয়ে তার বাড়ী অবধি ধাওয়া করে দুরন্ত প্রেম এব্যাপারে আপামোর বাঙ্গালিরই কিছু না কিছু অভিজ্ঞতা থাকতে বাধ্য, তার কিছু টক, কিছু মিষ্টি আর কারো কারো কপালে হয়ত শুধুই তেঁতো । তবে একথা স্বীকার করতে বাধা নেই যে আমার প্রেম বিষয়ক অভিজ্ঞতা শুধু অপূর্ব নয় সম্ভবতঃ অভূতপূর্বও এবং যতরকম প্রেম বাঙ্গালির সহজাত তার প্রায় প্রত্যেকটিই আমার ঝুলিতে বর্তমান 
একেবারে গোড়া থেকে শুরু করলে ব্যাপারটা বেশ ফরসা হবে। তখন পড়ি ক্লাস সেভেনে, আমার প্রিয় বান্ধবী গরমের ছুটিতে মামাবাড়ি গিয়ে প্রেমে পরলেন। প্রেমে তো শুধু পরলেই হয়না তাকে জল-সার দিয়ে টিঁকিয়ে রাখাও চাই; আর সমস্যাটা বাধল সেখানেই। কারণ মামাবাড়ি কোলকাতার বাইরে, পত্রালাপ ছাড়া গতি নেই। এদিকে বাড়িতে চিঠি এলে ধরা পরার ভয়। অতএব অগতির গতি এই শর্মা, বন্ধুর প্রেমকে মসৃণ করার মহৎ কাজে তখন আমাকে ঠেকানো দায়। নিজের বাড়িতে চোরের মত পরের চিঠির আশায় ওঁত্ পেতে থাকি, আর কাঙ্খিত সুগন্ধি রঙিন খামটি এলেই চিলের মত ছোঁ মারি পিওনের কাছ থেকে। এভাবে চলছিলো বেশ (অন্তত আমার বন্ধুর হাবেভাবে তো তাই মনে হোতো), বিপদ এল অন্য দিক থেকে। এক রোববার একটা ফোন আসার পরই বাবা গম্ভীর মুখে ডেকে জানতে চাইলেন কবে থেকে পরের কালোয়াতিতে পোঁ দিচ্ছি (ভাষাটা এক না হলেও বক্তব্যটা প্রায় তাই ছিল)? ‘প্রাণ যায় পর বচন না যায়’ কায়দায় চুপ করে থেকে সেদিন দুর্গতির একশেষ, অন্ততঃ বামাল সমেত ধরা পরা বান্ধিবীর থেকে তো কম নয়ই। যাই হোক এর পর বান্ধবীর প্রেমরোগ তো সারল, কিন্তু আমার?
আমার পোঁ দেওয়ার সেই শুরু, বান্ধবীদের হয়ে অর্ডারি প্রেমের-চিঠি লেখা এবং তার জবাব এলে আরও জুতসই একটা প্রত্যুত্তর দেওয়া আমার সাহিত্যচর্চার (যা কিনা বাঙ্গালির আর একটা বাতিক) একটা গুরুতর অঙ্গ হোল; অবশ্য এব্যাপারে উৎসাহ দিয়ে গাছে ওঠাতে বন্ধুরা কোনও ত্রুটি রাখেনি। তবে আমার সাহিত্যকীর্তি অন্য মাত্রা পেল বেশ কিছুদিন পরে। এক বান্ধবী তার অর্ডারি চিঠি আমার থেকে নিয়ে গিয়ে কপি না করে সিধা পাঠিয়ে দিতে লাগলো প্রেমিক প্রবরকে (প্রেমের ব্যাস্ততায় নষ্ট করার মত সময় কোথায়?)একদিন সেও চিঠি পাঠানোর আগেই বামাল সমেত গ্রেপ্তার; এক্ষেত্রে গোয়েন্দাটি তার দিদিচিঠিতে আমার ভুবনমোহিনী হাতেরলেখা চিনতে ভুল হবার নয় আর তা হোলও না। ফলে সেবার প্রানের সাথে কান নিয়েও জবর টানাটানি।  
এবার আসি কলেজ প্রেমের কথায়। তখন সবে ফার্স্ট ইয়ার, এক শীতের সকালে আমার বেস্টফ্রেন্ড (বন্ধু, বান্ধবী নয়) হন্তদন্ত হোয়ে টেনে নিয়ে গেলো লেডিস কমন রুমের সামনে। ‘ব্যাপার কি?’ আমি খানিক ভ্যাবাচ্যাকা। ‘নন্দিনী এখুনি ঢুকেছে, আমি দেখেছি’ বন্ধুর ধোঁয়াটে জবাব। ‘তাতে আমাদের কি?’ ‘আরে অনেক কিছু। শিগগিরই গিয়ে আমার নাম করে ফোন নম্বরটা চেয়ে নে’। ‘আমি কেন নিজে নে না’ আমার সরব প্রতিবাদ। ‘আরে গাধা লেডিস রুমে আমি ঢুকলে সবাই মিলে চামড়া গুটিয়ে নেবে না?’ বন্ধুর যুক্তি অকাট্য, কদিন আগে আমিই এহেন ঘটনার সাক্ষী ছিলাম (বেচারা নতুন পড়ুয়াটি পাশের টিচার্স রুমের সাথে গুলিয়ে ফেলেছিল)। আমি এরপরেও গাঁইগুঁই করছি, প্রধানতঃ নন্দিনীর ডাকসাইটে উন্নাসিকতার কারণে। ‘ইয়ে ইশক নেহি আসান,এক আগ কা দরিয়া হ্যায়, অউর ডুবকে জানা হ্যায়’ বন্ধু গর্জে উঠল। ‘কিন্তু ইশক তো তোর, আগুনের সমুদ্রে আমি কেন?’ আমার মিনমিনে জবাবের তোয়াক্কা না করে আমাকে ও প্রায় ঠেলে চালান করে দিলো ভেতরে, শুধু তাই নয় দরজার সামনে পাহারায় রইলো যাতে পালিয়ে যেতে না পারি। নিজের বন্ধুভাগ্যে এতদিন পরেও আমি নিজেই রোমাঞ্চিত।
‘হাই! আমি সেকশান-এ’। ‘জানা আছে, নন্দিনীর কাঠখোট্টা জবাব। আমি আরেকটু ঘন হবার জন্যে দুএকটা কথা বলি যা নিজের কানেই অত্যন্ত বোকাবোকা ঠেকে। নন্দিনী আমাকে ঝেড়ে ফেলে মন দেয় নিজের সাজসজ্জার দিকে। ‘তুমি সুমন্তকে চেনতো? তোমাদের সেক্সানের’। আমি প্রসঙ্গে আসার জন্যে মরীয়া। ‘হু কেয়ারস্’! ‘না মানে ও তোমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চায়’। ‘কিন্তু আমি চাইনা’। ‘কেন? ও কিন্তু খুব ভালো ছেলে’। সুপারিশের উত্তরে আমার পেছনের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে নন্দিনীর জবাব, ‘ভালো মানে তো ক্যাবলা, না হলে এধরনের প্রিমিটিভ ফ্রেন্ড জোটায়’। কানে আগুন, চোখে জল নিয়ে আমি কমন রুমের বাইরে

নিজের ইশক আসান কিনা জানিনা, তবে বন্ধুর ইশক যে পুরোপুরি আগুনের সমুদ্র তা আমার চেয়ে কেউ বেশি জানে না।

***

মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

ফিরে দেখা

একটা ছোট্ট মেসেজ হোয়াটস আপে, ‘কবে আসবি, তোকে বড় দেখতে ইচ্ছে করে’ -
বদলে দিলো আমার ব্যাস্ততার সকাল এক লহমায়;
আছি কারো মনে, এই ভাবনায় আটপৌরে আমি কেমন নতুন হলাম নিজের কাছেই ,
শুরু হোল দিন গোনা । 
ফ্লাইট দমদমের মাটি ছোঁয়া থেকেই বুকের ভেতর ধুকপুক  –
‘দেখা হবে তো?’
 কেজো ছুটোছুটি, বিরামহীন দায়বদ্ধতা;
তবু তারই মাঝে কয়েকটা মেসেজ আর রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা ।

নতুন গড়ে ওঠা মাল্টিপ্লেক্সের প্রবেশদ্বারে পৌঁছে গেছি বেশ খানিক আগেই,
কিছু উদ্বেগ, কিছুটা রোমাঞ্চ মনে করিয়ে দেয় সেই প্রথম যৌবন;
চিনতে পারব তো, আমাকে চিনবে তো? - কত না সংশয়;
অনেক ভিড়ের মাঝে কয়েকটা চেনামুখ, মুহূর্তে শুরু টাইম মেশিনের সফর ।
অনাবিল হাসি আর অফুরান কথায় ভরা কয়েক ঘণ্টা পার হয় পলকেই;
স্মৃতির রোমন্থনে ফিরে দেখা সেই কবেকার ছোটবেলা –
বড় মধুর, স্বপ্নময় ।

‘দেখা হবে আবার’ বেলা শেষের প্রতিশ্রুতি  নয় কোনও বিদায় সম্ভাষণ;
একে অন্যের প্রতি এ যেন প্রানের অঙ্গীকার ।
ফিরে দেখার সেই বিকেল ঝুলিতে ভরে দিলো অনেক কিছু  –
জানি সে যে ফুরোবার নয় ।।


***

বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৪

মিলন রাতি

ঝরোখার কিনারে বসে আনমনা রূপসী ,
ঈষৎ বেঁকানো গ্রীবায় এলো খোঁপা খানি,
গোধূলির লালিমায় রেঙেছে চিবুক -
সিঁথির কুঙ্কুম যেন পদ্মরাগ মণি
চকিত চঞ্চল তার কালো দুটি আঁখি,
মধুর আবেশে মগ্ন কোন সে স্বপনে -
থেকে থেকে ফিরে চায় কোন সে আশায়?
রাজঅন্তঃপুরবাসিনী কিশোরী কমলা,
রাওয়াল কুমার তিলস্কির নবপরিণীতা ।

সেদিন ছিল বৈশাখী পূর্ণিমা,
বেজেছিল মঙ্গল শঙ্খ, নহবতে বেহাগের সুর, 
নিভৃত বাসরে বেলা চামেলির সুরভি মধুর ।
‘এ কোন চাঁদ চাঁদনীকে মানায়  হার?’
অস্ফুটে শুধান কুমার
ওড়নির আড়ালে লজ্জায় থিরথির
কিশোরী কমলা, নবপরিণীতা রাজবধু  ।

নিভৃত বাসরে গর্জে ওঠে রনভেরি -
ফিরোজ শাহের সেনারা ঘিরেছে মরুদুর্গের দেউড়ি,
‘বিদায় দাও প্রিয়ে, যেতে হবে আজি ডেকেছে মাতৃভূমি’ ।
বরবেশ ছেড়ে বীরবেশে সাজে তিলস্কি রাওয়াল;
স্বামীকে রণটিকা পরায় কমলা,
ঠোঁটে আধো হাসি চোখে ভরা দীঘি টলমল ।
গভীর আবেশে হাতে হাত রেখে বলেন কুমার,
‘বাসর শয্যা থাকুক পাতা, ফিরব রানি,
তোমায় আমায় পূর্ণ হবে মিলন রাতি’ ।

ঝরোখার পাশে আঁখি মেলে বসে কিশোরী বধূ
বাসর শয্যা তেমনই পাতা, ফুল শুকিয়েছে শুধু ।
হাল্কা পায়ের আওয়াজে কমলা চমকে চায়
এই বুঝি দাসী আনল খবর, আসছেন স্বামী তার ।
দাসী নয় রানী রাজসি দেই -
‘সাজ বধূ আজ রাঙা চেলী আর ফুলসাজে
বাসর তোমার সফল হবে আজ রাতে’ ।
নতুন বসন, ফুল আভরন গলায় যূথীর মালা
শ্বেত চন্দন রাঙা কুঙ্কুমে অপরূপা কমলা ।
আকাশের চাঁদ আজও আছে সাথে, আছে সেই মধুরাত
ফুলডোর নয় অঙ্গার আজ সাজাল বাসর তার ।
যবন নিধনে রাজপুত বীর সাকা বেঁধেছে মাথে,
পুরনারী সব জহর আগুনে মরণ খেলায় মাতে ।
কুমারের পাগ বুকে নিয়ে বধূ আগুনকে করে সাথী
অবশেষে তার পূর্ণ হোল মহা মিলন রাতি ।।

পরিশিষ্টঃ দিল্লীশ্বর ফিরোজ শাহ্‌ তুঘলকের আক্রমন রুখতে জয়সলমির দুর্গে সাকা অর্থাৎ মাথায় গেরুয়া কাপড় বেঁধে মৃত্যুপণ করে যুদ্ধ করেছিলেন ১৭০০ রাজপুত আর জহরের আগুনে প্রাণ দিয়েছিলেন ১৬০০০ পুরনারী । যুদ্ধে রাওয়াল ডুডোজি ও কুমার তুলস্কির মৃত্যু হয় । এই কবিতার প্রেক্ষাপট এই ঐতিহাসিক ঘটনার ভিত্তিতেই । কবিতার কুমার তিলস্কি ও রানি রাজসি (রাওয়াল ডুডোজির মহিষী) ঐতিহাসিক চরিত্র, কমলা আমার কল্পনা প্রসূতা ।


বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০১৪

মানে না মানা

‘রাগ করেছো?’ মোবাইলে মেসেজটা দেখে ভাবতে বসলাম কাকে কাকে দুএকদিনের মধ্যে দাঁত খিঁচিয়েছি । ‘জবাব দিচ্ছনা যে, এতো রাগ!’ ‘আচ্ছা আমি নাহয় মাফ চাইছি হোল তো?’ এযে মেঘ না চাইতেই জল! শেষ কবে কেউ এমন মিষ্টি করে আমার রাগ ভাঙিয়েছে মনেই পরে না (বাড়িতে বাকিদের মানভঞ্জনের মনপলি আমারই কিনা) । ভাবছি জবাবে কি লিখি, এরমধ্যেই আরেকটা মেসেজ, ‘নীপা প্লিজ কিছু বল’ । যাক এতক্ষণে সব ফরসা হোল, মেসেজ গুলো নীপা নাম্নী এক সৌভাগ্যবতীর; মানে যার রাগ অন্ততঃ একজনের কাছেও ভারি দামী । বেচারি প্রেমিকের জন্যে প্রাণটা কেমন হুহু করে উঠল, জবাবে লিখলাম, ‘আমি তো নীপা নই, আপনার বোধহয় কিছু ভুল হয়েছে’ ।  ‘ভুল তো হোয়েছেই, আর সেতো আমি স্মীকার করছি, তাবোলে আমাকে এড়াতে বলে দিলে তুমি নীপা নও!’ ‘না না বিশ্বাস করুন আমি সত্যি নীপা নই, নীপা নামের কাউকে চিনিও না’ । ‘নীপা তুমি যদি বারবার এরকম বল আমি কিন্তু ঠিক একটা কিছু করে বসবো!’ আমি আতঁকে উঠি, শেষে কি আত্মহত্যার প্ররোচনায় জেলে যাবো! মেসেজের অভিমানী হুমকি সমানে চলছে; অনেক ভেবে মেসেজ করলাম, ‘বেশ তবে আমাদের বাড়িতে এসে যা বলার বল, আমি শুনবো’ । ভাবলাম, মোবাইল নম্বর ভুল হয়েছে বলে বাড়ির নম্বর তো আর ভুল হবে না, ফলে সমস্যা মিটবে । ‘নীপা সত্যি বাড়িতে ডাকছ? কোন গোলমাল হবে না তো?’ ‘না না গোলমাল কিসের, তুমি বাড়ির সামনে এসে একটু দাঁড়াও, ঠিক একটা ব্যবস্থা হবে’ আমি স্বান্তনা দিই । ‘বেশ তবে আসছি, ঠিক দশ মিনিটে বারান্দায় এসো আমায় দেখতে পাবে’ ।

খানিক পরে আবার মেসেজের গুঁতো, ‘কি হোল, বারান্দায় এসো, দেখ তোমার পছন্দের লাল টিশার্টটা পরেছি’ । এবার আর জবাব দিলাম না ।  সবে বিকেলের চা টা নিয়ে বসেছি, বাইরে থেকে ক্রিকেট বল এসে পরল বসার ঘরে; আজকাল এই এক জ্বালাতন পাড়ার হবু শচিন দের নিয়ে । রাগ করে বলটা বাইরে ফেলতে বারান্দায় গিয়ে আমি থ; লাল টিশার্ট পরা এক রোমিও জুলুজুলু চোখে চেয়ে আছে আমাদের বিল্ডিঙের দিকে । তেল সাবান না জোটা লম্বা চুল, গালে খোঁচা দাড়ি বছর পঁচিশের এক ছোকরা; আগে কোনদিন দেখেছি বলে মনে পরে না । কি বিপদ, শেষে মেসেজগুলো কি আমাকেই করেছিল নাকি? আমার সন্দীপা নামটাকেই ছোটো করে নীপা; মাথা একেবারে ঝিম ঝিম, ভেতরে এসে সোফায় বসলাম কোনমতে । প্রেম অন্ধ একথা অনস্বীকার্য, তাবোলে দেড়া বয়সের এক খিটকেল মহিলা! ছোকরার পছন্দের মাথামুণ্ডু পেলামনা, এদিকে চা জুড়িয়ে ঠাণ্ডা । এরমধ্যে বেলটা বেজে উঠল, কি জানি ছোঁড়ার এতো সাহস শেষে ফ্ল্যাটে হানা! ভয়ে ভয়ে দরজা খুলে দেখি বীথি, হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম । বীথি আমাদের নীচের ফ্ল্যাটে থাকে, মাস কমুনিকেসনে মাস্টার্স করছে, ভারি মিষ্টি মেয়ে; বউদি বলে ডাকে, মাঝে মাঝে গল্প করতে আসে আমার সাথে । সকালে ও আমার একটা শাড়ী নিয়েছিল, কলেজের কোন অনুষ্ঠানে পরবে বলে, বুঝলাম ফেরত দিতে এসেছে, ‘এতো তাড়া কিছু ছিলনা বীথি’ আমি ভদ্রতা করি । ‘তাড়া ছিল বইকি বউদি, দাদার ফোনটা আসায় দৌড়ে এলাম ফেরত দিতে’ । মাথাটা গুলিয়ে গেলো, ওকে ভেতরে আসতে বলে বসে পরলাম । ‘দাদা ফোন করে শাড়ী ফেরত দিতে বলল’? ‘ধ্যাৎ, কিযে বল; শাড়ী নয় এটা ফেরত দিতে এসেছি’ ও নিজের মোবাইলটা এগিয়ে দিলো । ‘মানে?’ আমি হতচকিত । আরে সকালে গল্পের চোটে ভুলে তোমারটা নিয়ে গেছিলাম, এখন দাদার ফোনটা পেয়ে বুঝতে পারলাম’ । আমাদের দুজনের মোবাইলের মডেল এক, অতঃপর......... এতক্ষণে ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল । ‘আমারও তোমাকে কিছু ফেরত দেবার আছে নীপবীথি’ । ‘কি?’ ‘সেটা বারান্দায় গিয়ে দেখ নীপা’ আমি হেসে বলি ।


***
Published in Prothom Alo on 21st March, 2016

বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

দাদাগিরি

এমনিতেই আমার মাথাগরম বলে বদনাম, তার ওপর রীতিমত চর্চা করা তাগড়া চেহারা; লোকে আমায় বিশেষ ঘাঁটায় না । পাড়ার ভালো মন্দের দায়, ছেলে ছোকরাদের ওপর নজরদারি, সে একরকম আমি নিজের দায়িত্ব বলে মনে করি; তাতে মাঝে মধ্যে একে ওকে একটু কড়কাতে হলে কি বা এসে যায়! তবে আজ সকাল থেকেই বিলের কাণ্ড দেখে মেজাজ আমার সপ্তমে, এর একটা শেষ না দেখে আমি আর ছাড়ছি না । বেশ কিছুদিন ধরেই ঘোষ বাড়ীতে ওর চুপি চুপি যাতায়াত আমি লক্ষ করেছি, মিয়াঁ বিবি যখন কাজে যায় তখনই বেটা উঁকি ঝুঁকি মারে খিড়কির দরজা, নয় রান্নাঘরের জানলা দিয়ে । কার সায়ে এসব চলছে তাও বুঝি; গেলো মাসে ভালবেসে ও বাড়ির মিনিকে একটা ফিস ফ্রাই খাওয়াতে চেয়েছিলাম । তা দোকান থেকে বাগিয়ে আনতে একটু ঠাণ্ডা হয়ে গেছিল আরকি, অমনি মুখ ঝামটে বলল ‘বাসি খাবার আমি খাই না!’ আর এই ছিঁচকে বিলে, তার ওপর কি দরদ!

আজ তিতলিদির জন্মদিন, ঘোষ বাড়িতে হেভি খাওয়া দাওয়া, পাড়াশুদ্ধু লোকের নেমন্তন্ন; আমিও যাবো, তবে একেবারে শেষের দিকে, নেমন্তন্নের ধার আমি ধারি না । তাই তো বিলেটাকে সন্দেহ, আমি তো জানি ব্যাটা চুরি বিদ্যেয় এরই মধ্যে হাত পাকিয়েছে, নির্ঘাত লোকের ভিড়ে হাতসাফাইয়ের তালে আছে । আর চুরির দোসর যখন ঘরেই মজুত তখন আর পায় কে! কিন্তু আমি থাকতে সেটি হতে দিচ্ছিনা, তক্কে তক্কে আছি, আজ হাতে নাতে ধরে ওকে পাড়া ছাড়া করে তবে আমার শান্তি ।

বাড়ির ভেতর থেকে মাছের কালিয়া আর ভেটকির পাতুরির গন্ধে রাগটা প্রায় গলে যাবার জোগাড়, কিন্তু না, কর্তব্যে অবহেলা এ শর্মা করে না, তাই না পাড়ায় আমার এতো খাতির! যাইহোক, দিপুদের পাঁচিলের আড় থেকে আমি ঠিকই নজর রাখছি হতচ্ছাড়া বিলের ওপর । লোকজন বেশ কিছু আসতে শুরু করেছে, মিনি ঢঙ করে তিতলিদির সাথে সাথে ঘুরছে, যেন জন্মদিনটা আজ ওরই! খাওয়ার আসরে হাঁকডাক বাড়ছে, ঠাকুর সামাল দিতে নিজেই পরিবেশনে হাত লাগিয়েছে; এই মওকায় বিলে একলাফে বাড়ির ভেতর, আর যায় কোথায় আমিও মারলাম এক লাফ, একেবারে বিলের ঘাড়ে । দুজনে গড়াতে গড়াতে রান্নাঘরের দরজায়, গায়ের জোরে ব্যাটা নেহাত কম যায় না, সঙ্গে তেমনি গলার জোর, জাপটাজাপটি, গর্জন; আজ কেউ একপা পিছব না, যা থাকে কপালে । ‘আ মল যা, এদুটো আবার ঠিক জুটেছে! মাছের গন্ধ পেয়েছে কি হতচ্ছাড়াদের দৌরাত্ব শুরু । ফেলে দিয়ে আয় তো ন্যাপা দুটোর ঘেঁটি ধরে!’ ন্যাপার ঠাকুমার খোনা গলার চিৎকার কানে যেতে না যেতেই ‘ঝপাস!’ কে যেন খামচে নিয়ে চুবিয়ে দিলো ড্রেনের জলে । অপমানে চোখে জল এলো, এই দুনিয়ায় ভালো কারো করতে নেই । এতো যে নিঃস্বার্থে পাড়ার দেখাশুনো করি, নাহয় দু চারটে মাছের টুকরো তার বদলে খাজনা ভেবেই নিই, তাবোলে ছিঁচকে বিলে আর আমি এক হলাম!

এর থেকে তো মাছ খাওয়া ছেড়ে দেওয়াই ভালো.................. নাহ্ সেটা বোধহয় পারা যাবে না!



***

শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

গরম ভাতে কাসুন্দি




অফিস টাইমের ভিড়, বাসটা মানুষের চাপে একদিকে হেলে পরেছে । দাদা একটু চাপুন তো!এক মুশকো জোয়ান হাঁকল মহিলা সিটের সামনে একপায়ে ভরে দিয়ে ঝুলে থাকা এক মিহি গোঁফকে । কি ব্যপার এবার কোলে বসবেন নাকি?’ জবরদস্ত মাসিমা ঝাঁঝিয়ে উঠলেন । দুদিকের হুড়োতে মিহি গোঁফ দিশেহারা, এরপর একেবারে ট্রাপিজের কায়দায় রড ধরে সিলিঙে ঝোলা যায় কিনা ভেবে দেখছেন । এই যে একটু সরে বসুন তো, বাচ্চাটাকে একটু বসতে দিন’; ‘কোথায় সরব আর জায়গা কোথায়?’ ‘কোনার সিটে অমন বেঁকে বসে আছেন আর জায়গা নেই! নিন সোজা হয়ে বসে বাচ্চাটাকে বসতে দিন। কথপোকথন চলছে বছর তিনেকের বাচ্চা কোলে এক অল্পবয়সী মা ও টিপটপ এক কলেজ পড়ুয়া আধুনিকার মধ্যে । আধুনিকা কথা না বাড়িয়ে সামান্য সোজা হয়, তাতে যে ইঞ্চি ছয়েক জায়গা হোল সেখানে বাচ্চা সমেত মা বসলেন বা বলা চলে বসার চেষ্টা চালালেন । ওরে বাবারে, হাঁটুটা একবারে থেঁতলে গেলো, ওইটুকু জায়গায় এতোবড় শরীর নিয়ে কেউ বসে!ফলতঃ এপাশের বউদির আর্তনাদ । এতবড় শরীর বলতে আপনি কি বোঝাচ্ছেন, আপনার শরীরই বা কম কিসে?’ ‘দেখুন, শরীরের খোঁটা দেবেন না, আমি আপনার খাই না পরি?’ ‘শুরু তো আপনিই করলেন!’ ‘একে জোর করে বসলেন তারওপর ঝগড়া করছেন লজ্জা করে না?’ ‘লজ্জা কেন করবে আপনি আমার শাশুড়ি নাকি?’ ‘ভাগ্যিস নই যা মুখ!’ চোপ, একেবারে চোপ! সকাল সকাল কোথায় একটু শান্তিতে যাব, তা না কাক চিল বসতে দেবে না!অল্পবয়সি মা আর বউদির যুগলবন্দীতে মাসিমার তারানা ।

অ্যাই, কি হচ্ছে সোজা হয়ে দাঁড়ান না, বাড়িতে মা বোন নেই নাকি?’ না কোনও দিদিমণি নয়, ঝাঁকড়া চুল কাঁধে ঝোলা বছর বাইশের এক দাদামনি সুর করে ধমকালেন মুশকোকে । যাচ্চলে, আপনি মা না বোন?’ মুশকোর ঠোঁটে নচ্ছারি হাসি । ছোটলোক!দাদামনি তাঁর অভিধানের সবচেয়ে চোখা গালিটি ঝাড়লেন, মুশকোর হাসি চওড়া হোল ।

দরজার কাছে ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন এক লম্বা বেনী দিদিমিনি, ‘একটু ভেতরে ঢুকতে দিন না’, দিদিমণির কাতর আহ্বান যেন রবি ঠাকুরের গান, মনে দোলা দেয় । আপাততঃ অবশ্য বাসটাই এমন দুলিয়ে দিলো যে লম্বাবেনী এক ছাপোষা দাদার একেবারে বুকে; আহা! যেন উত্তম সুচিত্রার এই পথ যদি না শেষ হয়’, অবশ্য ছাপোষা বউদি যদি দৃশ্যটা দেখতেন তাহলে পথের শেষ কোথায় গিয়ে হোত কে জানে! 

তখন থেকে বলছি সোজা হয়ে দাঁড়াতে, তবু হুঁশ নেই? আগে সোজা হয়ে দাঁড়ানো শিখে তবে বাসে উঠবেন, যতোঃসব !’  বাসের দুলুনিতে মিহি গোঁফও মাসিমার পদানত; এক্ষেত্রে অবশ্য প্রতিক্রিয়াটা প্রায় মহিষাসুর দলনী দুর্গার মত। দাদা টিকিট!ঠিক এইসময়ই কন্ডাক্টারের হাঁক মিহিগোঁফকে, ‘ব্যাপারটা কি বাস চালাতে পারেননা ঠিক করে আর টিকিট চাইতে এসেছেন?’ মাসিমার অপমানের ঝালটা পরল কন্ডাক্টারের ওপর । বাস ঠিকই চলছে, আপনার অসুবিধে হয় নেমে ট্যাক্সি করে যানসেও সমান তেরিয়া । কি বাস ঠিক করে চলছে? তখন থেকে ঢিকির ঢিকির যেন গরুর গাড়ী আবার ট্যাক্সি দেখানো?’ এবার সরব হলেন এক গম্ভীর চেহারার মেশোমশায়, আর তাঁর সাথে তাল জুড়ল প্রায় গোটা বাস । যা বলেছেন এই করেই কলকাতাটা একেবারে উচ্ছন্নে গেল । কথায় কথায় ভাড়া বাড়াবে অথচ কাজের বেলায় ফক্কা। বেগতিক দেখে কন্ডাক্টার সরে পরে, আলোচনা মোড় সম্পূর্ণ রাজনৈতিক । ‘এই যে কদিন পরপর ভার বাড়ানোর স্ট্রাইক এর পেছনে বিরোধীদের চক্রান্ত নেই ভেবেছেন?’ ‘আরে মশাই এ সবই সরকারের কারসাজি, ভোটের আগে ব্যাটাদের হাতে রাখতে চায়’। ‘মোটেই না কেন্দ্রীয় সরকার সব ব্যাপারে হাত উলটে বসে আছে তো রাজ্য সরকারের কি দোষ?’ ‘দেখুন মশাই সব কথায় কেন্দ্রকে টেনে আনবেন না, যতো বাহানাবাজ!’ ‘দেখুন মুখ সামলে, কেন্দ্রের নামে বললে আপনার গায়েই বা লাগছে কেন?’ ‘আপনি মুখ সামলে!’

ডালহৌসি, ডালহৌসি!কন্ডাক্টারের চিল চিৎকার যেন যুদ্ধবিরতির ঘোষণা; মৌচাকে ঢিল পরার মতই লেগে যায় হুড়োহুড়ি, লক্ষ্য একটাই, তাড়াতাড়ি বাস থেকে নামা । 

***