বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৬

ঝুলন দোলা

সকাল সকাল ঘন হয়ে এসেছে আকাশ, বারান্দার পাশের কৃষ্ণচূড়া আদুরে বাতাসে টলমল;
ব্যস্ত পায়ে বন্ধ করছি দরজার কাঁচ – কি যে হোল,
চোখ ফেরতে পারলাম না, কাজ ফেলে বেরিয়ে এলাম।
এলোঝেলো বৃষ্টির ছিটের মায়াবী স্পর্শ মেখে,আমি বসে থাকি বিমূঢ় মুগ্ধতায়;
কোন সে মোহনিয়া সুরে বশীভূত মন আমার।
ভরা শ্রাবণ, বৃষ্টি যে নিত্যসঙ্গী, এমন কাজ ভোলানো উচাটন হয়নি তো আগে!
মনে পড়ে গেলো, আজ ঝুলন।

আবছায়া স্বপ্নের মত মনে পড়ে সেই বর্ষণ স্নাত আর্দ্র অপরাহ্ন,
গোধূলী বেলার আবির বুঝিবা কিছুটা ধুসর,ছায়াঘন মাধবী বিতান;
আনমনা মেয়েটি একা বসে, গাছে বাঁধা দোলনায়, সাথী নেই কেউ আর।
আলোগোছা বেণীতে জুঁই ফুল,কপালে সোহাগী সিঁদুর,ঘননীল শাড়ীতে যমুণার ঢেউ;
কাজল কালো তার দুটি চোখ, বড় মায়াময়।
বিয়ের পর এই প্রথম শ্রাবণে এসেছে বাড়ী, না বাড়ী তো নয় আর, বাপের বাড়ী,
আনন্দ উচ্ছ্বাসে, আদরে, খাতিরে নিটোল ছিল সারাটা দিন –
তবু কেন এই উদাসী ক্লান্তি, ফাঁক পেয়ে ছুটে আসা বাগানের প্রিয় কোণটিতে!

দূর থেকে ভেসে আসে বাঁশরীতে মারবা-র তান, সন্ধ্যে ঘনিয়ে এলো ওই,
রূপোলী জোছনা মেখে ফুলবন স্বপ্ন বাসর;
হালকা বাতাস খেলা করে কপালের ঝুরো চুলে,জমে ওঠা মুক্তাবিন্দু  ছলকায় চোখে।
দীর্ঘ ছায়া ফেলে, শান্ত পায়ে কে এসে দাঁড়ালো ওই দোলনার পাশে!
ভারি সুকুমার হাসিমাখা মুখখানি, আনন্দ মূরতী;
মৃদু দোলা দেয় সে ঝুলনায়, চমকে ফিরে চায় মেয়ে, চেয়েই থাকে বুঝিবা অনন্তকাল,
সব অভিমাণ ভেসে যায় শ্রাবণ বরিষণে; -
ঝুলন দোলায় দোলে ফেলে আসা কৈশোর, চিরন্তন প্রেমে।


***
©1916 ananyapal ALL RIGHTS RESERVED

বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৬

কুড়োনো মাণিক

মহল্লার সবচেয়ে বড় দোকানটা সাবির মিঞার, শাড়ীর সম্ভার সেখানে চোখ ধাঁধানো;
ছেলেটার সাথে আমার সেখানেই দেখা, ফুফার পাশে পাশে শাড়ী দেখায় –
লক্ষ্য করেছি দাম নিয়ে মতবিরোধে, আমার হয়ে সুপারিশ করে হামেশাই;
‘ছেলেমানুষ, ঝানু দোকানদার তো নয়’ স্নেহ অনুভব করি মনে মনে।
সেবার বন্ধু এসেছেন কোলকাতা থেকে, জামদানী পাড়ায় যেতেই হয় অতএব,
এমন কপাল, সাবির মিঞা গেছেন মহাজনের কাছে, দোকান বন্ধ;
ভাবছি দাঁড়িয়ে কি করি, বান্ধবীও আশাহত,
‘আপা আসেন ইদিকে’ পাশের খুপরি দোকানটা থেকে উঁকি দিলো ছেলেটার হাসি মুখ।
 একটু ইতস্তত করে এগোই,’এটা কার দোকান?’
‘আল্লাহ্‌র দোয়ায় আমারই’ ছেলেটার সলজ্জ উত্তর, সেইসঙ্গে এগিয়ে দেওয়া ছাপা কার্ডটা থেকে প্রথম জানলাম ওর নাম দিলাবার।

‘শাড়ী দেখাতে পারবেন কিছু পছন্দসই?’ আমি তখনও ধ্বন্দে;
রঙ আর ডিজাইনে আমার পছন্দ যে একটু ব্যতিক্রমী; –
বান্ধবীও শিল্পীমনা, সাদামাটায় মন উঠবে না জানি।
‘শুধু পাঁচটা শাড়ী দেখাবো আপনাকে’, ‘মোটে পাঁচটা? আর নেই বুঝি?’ –
আমি আঁতকে উঠি;
‘আছে আলমারি ভরা, কিন্তু সেসব আপনার জন্যে নয়, দেখুনই না আগে’,
মুচকি হেসে বুঝিবা চ্যালেঞ্জ জানায় দিলাবার।
পাঁচখানাই দেখিয়েছিল সেদিন; আমরা পলক ফেরাতে পারিনি।
ভয়ে ভয়ে দাম জানতে চেয়ে হোঁচট খেলাম –
এতো অবিশ্বাস্য রকমের কম! গোলমাল আছে কিছু শাড়ীতে?
বিভ্রান্তি নিয়ে ছেলেটার চোখের দিকে তাকিয়ে মিলল সব প্রশ্নের উত্তর;
‘আপনি আমার বইন, আপনার জন্যে আলাদা দাম’, কথাটা বিশ্বাস করেছিলাম সেদিন।
 এরপর থেকে দিলাবারের কাছেই যাই শাড়ীর খোঁজে,
পাঠাই বন্ধুদেরও –
দাম নিয়ে অভিযোগ করেনি কেউই, শাড়ীর মান নিয়েও নয়।

গরমের  ছুটিতে বেড়ানোর লম্বা পরিকল্পনায় অনেকদিন বাড়িছাড়া,
ইতিমধ্যে এলো সেই দুর্যোগময় রাত,শোকে স্তব্ধ ঢাকা –
আটকে পড়লাম কোলকাতায় আরও বেশ কিছুদিন।
প্রায় দুমাস পর ক্লান্ত শরীর, বিষণ্ণ মন নিয়ে ফিরলাম বাড়ী,
একটু গুছিয়ে নিয়ে মনে পড়ল, দিলাবারকে একটা শাড়ীর অর্ডার দেওয়া ছিল,
ফিরেছি জানান দেওয়া চাই, বেচারার টাকা আটকে থাকে নচেৎ।
‘আপা আপনারে ফোনে পাই না, আমার মনটা যে কেমন করে!’ ছেলেটার আকুলতা দুলিয়ে দেয় আমায়;
‘কোলকাতায় ছিলাম, তাই এখানের নম্বরটা বন্ধ ছিল’ আমি বোঝাই।
‘আপনার বাসার এত কাছে ঘটল ঘটনাটা, ফোনে পাই না –
আমি দুইরাত ঘুমাই নাই, মানত করছিলাম মসজিদে;
দুই দিন পর কাগজে নিহতদের নাম পাইয়া, তবে শান্তি; আমার বুইনের কিছু হয় নাই; -
ততক্ষণে আমি ভাষাহারা, লবণাক্ত জলে ভিজে ঠোঁট।
কখন অজান্তে আমার অস্তিত্বকে ভয়ানক দামী করে দিলো ছেলেটা,
আঁকাবাঁকা পথের বাঁকে কুড়িয়ে পেলাম এক অমৃত মাণিক;
জীবনে আর কিছু চাওয়ার বাকী থাকে কি এরপরও?  

***
©1916 ananyapal ALL RIGHTS RESERVED


মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০১৬

কিনারা

জলের উথাল পাথাল ঢেউ, দাঁড়ের ছুপ ছুপ টানে,
ভেসে চলে নৌকোখানি কিনারার পানে;
পূবের হাওয়ায় দোল দিয়ে যায় আমার ধুসর চুলে,
আনমনে গান গেয়ে উঠি কখন মনের ভুলে;
সোনা রোদের নরম ওমে আমার গালে রঙ,
চোখ বুজে তার নরম আদর মাখি বহুক্ষণ
শ্যামলা ঘাটের কোল ছাড়িয়ে দিয়েছি পার সে কোন যুগে,
পেছন ফিরে চাইতে গেলে, চোখে তারই স্বপন জাগে,
মায়ায় বাঁধে মন

কাজলা নদীর কালো জলে, নিরুদ্দেশের অচিন নেশা,
নবীন বেলায় করেছিল আমায় যাযাবর,
সপ্ত সিন্ধু পার হব, বুক বেঁধে এই আশায়,
হলাম আমি নাবিক সওদাগর
ঘাটে ঘাটে পসরা ভরে হোল অনেক বেচাকেনা,
জমা খরচ হিসেব কষে, মিটিয়ে দিয়ে সকল দেনা,
নতুন করে ভেসেছি আজ অনেকদিনের পর

রাতের তারার শামিয়ানা, ভোরের অরুনিমা,
পাখীর ঠোঁটে বয়ে আনা টুকরো শ্যামলিমা;
ছড়িয়ে আছে চলার পথে এমন যত মণি,
দুচোখ ভরে কুড়িয়ে তাদের, আজকে আমি ধনী।
ভেসে আসা টুকরো গ্লানি, ঝড়ের রাতের আঁধার,
তাদেরও রেখেছি তুলে ভান্ডারে আমার
অপরাহ্নের শান্ত আলোয় স্পষ্ট পরপার,
সন্ধ্যা হলে সেইখানেতে বাঁধব নোঙর।
মাটির বুকে পাতব শয্যা শেষের সেই দিনে,
ঘাসের চাদর রাখবে ঢেকে পরম যতনে;
ঘাসের ফাঁকে রইবে ফুটে জমানো ধন যত,
কাঁটাও কিছু হবে শোভা ফুলের মালার মত।

©ananyapal2016

শুক্রবার, ১৮ মার্চ, ২০১৬

দায়বদ্ধ

মেয়েটি ছিল এত রোগা, যে কোমরটা একহাতে ধরা যায়,
অপটু হাতে ইস্ত্রী করা সুতির স্কুল ড্রেস ঝুলে থাকত শরীরে কাগজের ঠোঙার মত,
মাথার দুপাশে দুটো বেণী, রোগা চেহারার সাথে খাপ মিলিয়ে ডিগডিগে;
তবে শীর্ণ চেহারায় মুখখানি কিন্তু ভারি ঢলঢলে, চোখ দুটি  আশ্চর্য রকম শান্ত।
ক্লাসের ফাঁকে হিসেবহীন গল্প, বা টিফিন বেলার হুল্লোড়ে আড্ডা, কোনোটাতেই থাকত না  গীতা,
ভালো রেজাল্টের সমাদর, বা দুষ্টমির বকুনি, দুটো থেকেই ছিল সে উহ্য;
শুধু বার্ষিক খেলার রেসে দেখতাম দৌড়োয় মেয়েটা, আর অবাক করা নির্লিপ্ততায় সমাপ্তির দড়ি ছোঁয় সবার শেষে;
‘এই পালকের মত চেহারা নিয়েও হারে!’ আশ্চর্য হতাম মনে মনে, ঈর্ষাও হোত ওর নির্লিপ্ততা দেখে,
হারের তালিকায় ওর ঠিক পরের নামটিই যে থাকত আমার।

পরীক্ষার শেষে গরমের ছুটি আগতপ্রায়, ক্লাসে উপস্থিতি নগন্য,
সঙ্গীহীনতার অবকাশে সেদিন বসেছি গীতার পাশের জায়গাটিতে,
শান্ত মেয়ের নীরব হাসিতে প্রশ্রয়, গল্পের ঝুড়ি খুলে বসতে আমার কাছে সেটুকুই ছিল যথেষ্ট;
অবিরাম কলস্রোতে, মাঝে মাঝে মাথা নেড়ে অংশ নেয় আমার মিতভাষী সহপাঠিনী।
‘তোর বাবা কি করেন রে?’ অনেক কথার ভীড়ে জানতে চাই একসময়,
‘বাবা নেই, কাকা দেখাশোনা করেন আমাদের’ –
কৈশোরের রোদমাখা জীবন, স্বপ্নের বুদ্বুদে বাস, তাই এই পিতৃহীনতা অবাস্তব লাগে,
সহানুভুতি নয়, বিস্ময় জেগেছিল সেদিন, ‘বাবা নেই এমনো হয়!’
কথার মোড় ঘুরতে সময় লাগেনি বেশী, প্রসঙ্গ পালটেছিল গীতাই, ওর সাবলীল নির্লিপ্ততায়।

হাফ ইয়ার্লির রিপোর্ট কার্ড বিলি হচ্ছে ক্লাসে –
‘মনে করে স্কুল ফী দিয়ে দিয়ো তোমরা’,  কয়েক জনেরটা সরিয়ে রেখে জানালেন ক্লাস টিচার;
অভিজাত বেসরকারি স্কুল, ফী দিতে ভোলা চলে না সেখানে।
পরেরদিন বিলি হোল জমা রাখা সব রেজাল্ট, শুধু গীতারটা ছাড়া,
‘আজও ফী আনতে ভুলে গেছ?’ দিদিমণি উটকো ঝামেলায় কিছুটা বিরক্ত;
গীতা স্বভাবসিদ্ধ ভাবেই মৌন।
এভাবে চলল আরও দুটো দিন, মেয়েটার গেঁতোমিতে উত্যক্ত শিক্ষিকা,
মনে মনে চটে উঠি আমিও ওর অবাক করা ভুলোমিতে,
ভোলার অভ্যেসে মাঝে মাঝেই বকুনি যোটে আমার, তাবলে এতোখানি!

‘এ কি দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যবহার তোমার! বাড়ীর লোকই বা কি, রেজাল্ট দেখার ইচ্ছে নেই?’ –
গর্জে ওঠেন ক্লাস টিচার ছুটি পড়ার দিনটিতে অসহায় ক্রোধে;
সারা ক্লাসে থমথমে নিস্তব্ধতা, সকলের দৃষ্টি আটকে আছে পিছনে বসা রোগা মেয়েটার দিকে;
ওর আনত চোখ আর ঘেমে ওঠা মুখ দেখে হঠাৎ মনে হয়, তেমন নির্লিপ্ত লাগছেনা তো ওকে আজ!
কি যে হয়ে যায় কয়েক পলকে, অচেনা মোচড়ে খালি হয়ে যায় বুক;
ভীষণ লজ্জায় অদ্ভুত এক দায়বদ্ধতা অনুভব করি আমি -
বন্ধুর গেঁতোমিতে নয়, এ দায়বদ্ধতা আমার প্রাপ্তবয়স্ক সমাজের অনুভূতিহীনতায়।

***


©1916 ananyapal ALL RIGHTS RESERVED

সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

সবুজের সমারোহে

নিবিড় বনছায়ার অমোঘ নিস্তব্ধতা ভারি প্রাণবন্ত,
পাতা ঝড়ার অস্পষ্ট শব্দ যেন প্রকৃতির হৃদস্পন্দন,
বিরামহীন নৈঃশব্দে অদ্ভুত শান্তির নিমগ্নতা;
আলিঙ্গনবদ্ধ গাছের সাড়ির ফাঁকে জেগে আছে গলিপথ,
আধো অন্ধকারে, আবছায়া; 
সেই অচেনা পথের বাঁকে খুঁজে পাই আমার ‘আমি’ কে,
হারিয়েছিলাম যাকে চেনা জীবনের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে।

সপ্তাহান্তের ছুটিতে ঢাকার হট্টগোল থেকে বিরাম নিতে ঠিক হোল যাব শ্রীমঙ্গল। সিলেটের কাছাকাছি চা বাগানের দেশ এই জায়গাটি মাত্র ঘন্টা চারেকের রাস্তা গাড়ীতে; অতএব ভোর থাকতেই বেরিয়ে পরা গেলো। বসন্ত সমাগত প্রায়, তবু আঁধার করা কুয়াশায় কয়েক হাত দূরের জিনিষও অদৃশ্য; তাই যাত্রার শুরুটা বেশ রোমহর্ষকই হোল বলতে হয়। এভাবে কুমিল্যা পার হয়ে হাইওয়ের ধারে ‘উজান বাটী’ ধাবায় নিলাম জলখাবারের বিরতি; সুস্বাদু ও পরিচ্ছন্ন ব্যবস্থায় খাওয়া দাওয়া হোল এলাহি এবং বিরতি একটু বেশীই লম্বা। ধাবার ভেতরেই এক মজাদার খাদি দোকান, তাতে কাঁথা কাজের চাদর, বাটিকের শাড়ী, খদ্দরের পোশাক এসবের সাশ্রয়ী সম্ভার; সেখানে বেশ খানিক শপিং করে ফেললাম। দ্বিতীয় দফার যাত্রায়, পথের দুধারে যতদূর চোখ যায় ঘন সবুজের খেলা দেখতে দেখতে গন্তব্যে পৌঁছানোর ইচ্ছেটাই ক্রমে চলে যাচ্ছিল, মন ভালো করা এই পথের শেষ যেন না হয় এটাই ভাবতে শুরু করেছিলাম কখন আনমনে।
এই পথ যদি না শেষ হয়...
আসতে আসতে প্রকৃতির পরিবর্তিত রূপ দেখে মালুম হোল, পার্বত্য উপত্যকার চা বাগানের দেশে এসে পড়েছি আমরা। দুপাশের ঢালু জমিতে ঘন সবুজ চা বাগান আর মাঝে মাঝে সোনালি রবার গাছের সারি, মাঝখান দিয়ে পাহাড়ী রাস্তা কুয়াশার পাতলা চাদরে মোড়া। একটা দুটো ঘুমন্ত শহরতলী পেরিয়ে পৌছলাম আমাদের গন্তব্য গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টে। রিসেপশনে জানালো আমরা হাজির হয়েছি সময়ের আগেই, ঘর গোছাতে সময় লাগবে কিছুটা। অতএব, লাগেজ জমা করে বেরিয়ে পরলাম রিসোর্টের ভেতরটা ঘুরে দেখতে। বাইরে দিকের কিছুটা অংশে হোটেল কতৃপক্ষ অনাবাসী টুরিস্টদের সময় কাটানোর ছাড়পত্র দেন; সেখানে গিয়ে দেখি নানারঙের এক মজার হাট। পয়লা ফাগুন (বাংলাদেশের প্রেম দিবস) পালন করতে সেখানে ঝাঁকে ঝাঁকে কমবয়সী ছেলে মেয়ে ঘুরে নয় উড়ে বেড়াচ্ছে বলাই ভালো। আমরা (আমি ও আমার কর্তা) একটু তফাতে কফিশপে বসে তাদের লক্ষ করছি, হঠাৎ দেখি কয়েকজন যুবক হাতে ডান্ডা নিয়ে উদ্ভভ্রান্তের মত কৃত্রিম হ্রদের চারপাশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, মনে মনে শঙ্কিত হলাম, এ আবার কি উৎপাত! ‘আরে ডান্ডা কোথায়, সেলফি স্টিক নিয়ে ঘুরছে’ কর্তা আস্বস্ত করলেন; বাহারে পরিমন্ডলে নিজের ছবি তুলে ফেসবুকে দেবার চাপ তো কম নয়!
সবুজের দেশে

রবার গাছের সাড়ি
হোটেলেও সবুজের ঘেরাটোপ



পথের বাঁকে
টিলার ওপর শান্তির নীড়
পরদিন প্রাতঃরাশ সেরে আমরা গেলাম লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বন দেখতে, কয়েক কিলমিটারের মধ্যেই তার অবস্থান সেখানে বনের অন্দরে সবুজের সমারোহ শান্ত সমাহিত, পায়চলা পথে হাটতে হাটতে চমকে উঠি পাতা ঝরার শিরশিরে শব্দে পাখিদের কলতান কোথাও জাগিয়ে তোলে সুরের লহরী, প্রজাপতির ঝাঁক খেলে বেড়ায় কোথাও আপন খেয়ালে বনের পথে কিছুটা সময় কাটিয়ে আমাদের সারথীর উৎসাহে রওনা দিই মাধবপুর চা বাগানের দিকে একে ওকে জিজ্ঞাসা করে পৌঁছুতে লেগে গেলো খানিকটা সময়, ফলে দেখা হয়ে গেলো কিছূ গ্রামের বসতি ও চা বাগানের জীবনযাত্রা সেদিনটা ছিল সরস্বতী পূজোর পরেরদিন, বাগানের কচিকাচাদের প্যান্ডেল ঘিরে উৎসাহ দেখে মনে পড়ে যাচ্ছিল নিজের ছোটবেলা মাধবপুর বা ন্যাশনাল টি কম্পানীর চা বাগানে আছে পাহাড় ঘেরা ভারি সুন্দর একটি কৃত্রিম হ্রদ, ব্রিটিশ মালিকানা কালীন সময়ে সেটি তৈরী হয়েছিল বাগানে জল সরবরাহের জন্যে সেই লেকের জলে থরে থরে ফুটে আছে দেখলাম বেগুনী রঙের শালুক, আমার অনভ্যস্ত চোখে সে যেন রূপকথার দুধসায়রে নীলপদ্মের বন; যেখানে লুকিয়ে আছেন কুঁচবরণ রাজকন্যে ভিনদেশী রাজপুত্রের অপেক্ষায়      

বনের একপাশে রেললাইন

বনপথে




যেখানে প্রজাপতি, সেখানে আছে সেও
দোয়েল বলে 'টুকি'
বক তপস্বী
দুধসায়র
রাজকন্যে আছেন কি?
মনহরিণী
ফেরার পথে গেলাম শ্রীমঙ্গল বাজারে, সেখানে ‘কুটুমবাড়ি’ নামের একটি রেস্তোরাঁয় তার নাম মাহাত্যেই খেতে ঢুকলাম। খেতে বসে বুঝলাম নাম খানি একেবারে উপযুক্ত; নাহোক দশ রকম শুধু ভর্তাই আছে তাদের মেনুতে, আদর করে খাওয়ানোর ধরণটাও সত্যিই আন্তরিক। রাজকীয় আহার সেরে পাশেই গোপাল ভাঁড়ের ছবি আঁকা ‘পেটুক’ মিষ্টান্ন ভান্ডারে গিয়ে মধ্যান্ন ভোজের মধুরেণ সমাপয়েত করা গেল। এরপরে আমরা খুঁজতে বেরোলাম বিখ্যাত নীলকন্ঠ টি কেবিন, যেখানে কয়েক দশক ধরে পাওয়া যায় আটরঙা চা। আর্মি ক্যান্টনমেন্ট ছাড়িয়ে মেঠো পথের বাঁক নিয়ে অবশেষে পৌছলাম সেখানে, চারপাশে ঘন সবুজের মাঝে একটা ঘুমন্ত মার্কেট স্কোয়ার; চা বিক্রির থেকে শিল্পকর্মটাই যেখানে বড় কথা। বন্ধ দরজার আড়ালে তৈরী হয় এই চা, যদিও ইদানিং কয়েকটা ইমিটেশন বেরিয়েছে, দুঃখ করে জানালেন দোকানের ক্যাশিয়ার। চা টি খেতে খুব উচ্চমার্গের একথা বলা চলেনা, তবে দেখবার জিনিষ সত্যি। এর পাশেই একটি মনিপুরি শিল্পের দোকান এবং পাশেই মনিপুরি পাড়াতে রয়েছে এরকম আরও অনেক কুটির শিল্প বিক্রয় কেন্দ্র দাম ও গুণমানে যা বেশ আকর্ষণীয়।    


সেই চা শিল্প...

আট রঙা চা

অবশেষে পড়ন্ত বেলায় হোটেলে ফিরে ঘরে ঢুকে দেখি রাখা আছে ভ্যালেন্টাইন্স ডে র উপলক্ষে ছোট্ট একটি হার্ট শেপের কেক। বসন্তের আবির রাঙা বিকেলে, ভালবাসা দিবসের গোলাপী হৃদয় পেয়ে সেদিন মন্দ লাগেনি একথা স্বীকার করতে বাধা নেই।
সব মিলিয়ে দুটো দিন যেন স্বপ্নের ঘোরেই কেটে গেলো, পরদিন সকালে ঢাকার পথে পাড়ি দিতে দিতে মনে হোল ওই সবুজের সমারোহের ছোঁয়া রাঙিয়ে দিয়েছে আমার শহুরে মনটাকেও কখন অজান্তে; আর সেটাই এই ছুটির অভিযানে আমার বড় পাওনা।
***

©1916 ananyapal ALL RIGHTS RESERVED

All photographs are copyrighted by Dilip Pal ©1916 dilippal ALL RIGHTS RESERVED

শুক্রবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

বেগম বাহার

আসমানী রঙে মিষ্টি পাখিটা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে দিচ্ছে তার ডানা,
ডানার ফাঁকে ফাঁকে রুপোলী জোছনা – যেন অভিমানী প্রিয়া;
ঠক্ ঠক্ ঠক্ ঠক্ ছন্দময় আওয়াজ নেশা ধরায় ঝিমোনো দুপুরে,
নিপুণ হাতের সোনারকাঠি ছুঁয়ে যায় ঘুমন্ত আকাশ,
জেগে ওঠে স্বপ্নরাজ্য মায়াজালের সুক্ষ কারুকাজে।
শিল্পীর পেলব আঙুল আত্মমগ্ন টানা পোড়েনের জটিলতায়,
একজোড়া কচিহাত তাঁতের অন্য প্রান্তে পাড় দেয় সুতোয়,
আসমানী রঙে নয়, মন পড়ে আছে তার রঙিন ঘুড়ির পিছে, উন্মুক্ত আকাশে।   

মায়াবী রাতের মধু-জোছনায় ভেসে যাচ্ছে ঘরটা,
ফুলসাজ আর আসমানী বেগমবাহারে নববধূ বেহেস্তের হুরী,
কলকা পাড়ের আঁচল  ঘিরে আছে তার লজ্জানত সুকুমার মুখ,
ভুল হয় বুঝি বা নীলসায়রের মাঝে একখানি শ্বেতপদ্ম -
পাঁপড়ি মেলবে ভোরের শিশিরের ছোঁয়ায়।
সুখস্মৃতি মেখে শাড়ীর ভাঁজে ভাঁজে শুরু হয় নতুন পথচলা,
আলতো আদরে জায়গা পায় জামদানী আলমারির মহার্ঘ কোণায়।

তাঁতঘরের কোণ ঘেঁসে চিলতে দাওয়াটাতে জ্বলছে মাটির উনুন,
ফুটন্ত ভাতের গন্ধে চনমনে বাতাস।
আগুনের তাতে শীর্ণ মুখখানি বিন্দু বিন্দু ঘামে তৈলাক্ত,
কপালে লেপ্টে থাকা চুলে শ্রাবণের ঘনঘটা;
ছেঁড়া শাড়ীর ঘোমটার ফাঁকে মুখখানি আজও মায়া জাগায়।
সুপটু আঙুলের জাদু ছড়িয়ে পড়ে বাহারে জামদানীর অলিতে গলিতে,
একখানা জামরঙা ছাপা, বৌটার জন্যে, – শাড়িটা সারতে হবে তাড়াতাড়ি;
ঠক্ ঠক্ ঠক্ ঠক্ দ্রুত হয় তাঁতের শব্দ, না কি এ শিল্পীর বুকের স্পন্দন!


©1916 ananyapal ALL RIGHTS RESERVED

বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৬

মনে পড়ে?

অচিরাবতীর তীরে, ছোট একখানি গ্রাম,
একপাশে তার ছায়ামাখা তরুবীথি মঞ্জরিত বসন্ত সমাগমে;
কিংশুক রাঙা বনপথে, আমার নিত্য আসা যাওয়া গাগরী ভরনে।
দিনান্তের গোধূলী বেলায়, ধীবর নৌকাখানি ফেরে ঘাটে,
সোনামাখা জলে ছায়া ফেলে তোমার সুঠাম দেহ, হাতে মোহনিয়া বাঁশী,
বাজাও উজানের সুর বাঁশরীর তানে, মুখে স্মিত হাসি।
ক্ষণিকের চকিত চাহনি খুঁজে নেয় একে অপরের পথ চাওয়া,
আকাশের অস্তরাগ ঘন হয় আমার লজ্জানত মুখে,
নিবিড় আবেগ মুগ্ধতা আনে তোমার দুচোখে;
সাক্ষী থাকে মহাকাল।

চৈতী পূরণ্মাসী, মদনোৎসবে মাতোয়ারা কুঞ্জবন,
জাতি, যূথী, কিংশুক, চম্পকে পাতায় পাতায়  বর্ণময় আলাপন,
রাঙা বাস, হরিদ্রায় ছোপানো উত্তরীয়, গলায় চম্পক মালা,অভিসার সাজে –
যুগলে প্রেমিকের দল, ঘুরে ফেরে উৎসুক উচ্ছ্বাসে বন মাঝে।
আমি বসে থাকি ঘাটের কিনারে, কলসী হাতে, চোখে ভীরু চঞ্চলতা,
ধীরে ধীরে সূর্য মিলায় অস্তাচলে, নদীর মর্মরধ্বনি একাকার হয়ে যায় আমার বক্ষ স্পন্দনে,
শূন্য ঘাটে একেলা আমি নিস্ফল অপেক্ষায়, উৎসব দিনে আসবে না সে, মন জানে;
চন্দ্রকিরণে অচিরাবতীর জল তরল অভ্র, আমার দুচোখেও তার রেশ,
অর্থহীন করুণ বিষাদে উঠে আসে দীর্ঘশ্বাস আনমনে,
দখিনা বাতাস ছুঁয়ে যায় কপালের চূর্ণ কেশ আলতো চুম্বনে।
আলগোছে একখানি কুন্দমালিকা ঝরে পড়ে কন্ঠে আমার আচম্বিতে,
চমকে তাকাই পিছে, বাঁশী হাতে রয়েছ দাঁড়িয়ে, কন্দর্পের বেশে,
‘আজি সব অপেক্ষার শেষ’, নিবিড় আলিঙ্গনে জড়িয়ে আমায় বলেছিলে হেসে,
মনে পড়ে?    

যুগান্ত পরে, সেই কুন্দহার আজও আছে রাখা সঙ্গোপনে,
বৈজয়ন্ত সম পরম আদরে, হৃদয়ের এককোণে;
সেদিনের মোহনিয়া তান বাঁশীর সুরে,
আজও কি তোমার মনে পড়ে?

***

©2016 ananyapal ALL RIGHTS RESERVED

সোমবার, ৪ জানুয়ারী, ২০১৬

মন উদাসীর টানে

শীতের ছুটিতে কোলকাতা গেছি কদিনের জন্যে, এক বন্ধু ধরলেন শান্তিনিকেতন চলো পৌষমেলায়। আঁতকে উঠে বললাম, সেখানে তো মানুষের ঢল, থাকার জায়গা পাওয়া দায়। জানা গেলো বন্ধু সম্প্রতি পৌষমেলা প্রাঙ্গনের খুব কাছেই গুরুপল্লীতে একটি মনোরম বাংলো করেছেন; নিমন্ত্রণ সেই বাড়িতে থাকার। অতএব,নির্ভাবনায় বেরিয়ে পড়লাম গাড়ী নিয়ে ২৫শে ডিসেম্বর ভোরে। প্রসঙ্গত, বাংলা ক্যালেন্ডারের ৭ই পৌষ থেকে তিনদিন পৌষমেলা আয়োজিত হয় শান্তিনিকেতনে, যার শুরু হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের আমলে ব্রাহ্মমন্দির প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে। উপলক্ষ যাই হোক, কবিগুরুর উদ্দেশ্য ছিলো এই মেলার মাধ্যমে স্থানীয় প্রান্তিক মানুষদের (প্রধানত সাঁওতাল) হাতের কাজ শহরবাসীর কাছে তুলে ধরা; সেই প্রথার ব্যাতিক্রম হয়নি আজও। 

কোলকাতা থেকে গাড়ীতে শান্তিনিকেতন তিন ঘন্টার পথ, পথে ল্যাংচা মিষ্টির জন্যে খ্যাত শক্তিগড়ে কচুড়ি ও ল্যাংচা সহযোগে শীতের প্রাতরাশ। বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ শান্তিনিকেতন পৌঁছে, সেই চেনা লাল মাটির পথ, ফুলের বাগান ঘেরা ছোট ছোট বাংলোবাড়ী দেখে মনটা জুড়িয়ে গেলো; আশ্রম চত্ত্বরের পুরোন সব গাছ আর তার বাঁধানো বেদীমূল আজও যেন কবিগুরুর স্বপ্নের আশ্রম জীবনেরই আভাষ দেয়, সভ্যতার ছোঁয়ায় আঁচড় লাগেনি তার নির্মলতায়। বন্ধুর বাংলোয় পৌঁছে দেখলাম, ফুলে ফলে ভরা এক স্বর্গরাজ্য, রোদ মাখা তার দক্ষিণের বারান্দাটিতে বসেই কাটিয়ে দেওয়া যায় অনন্তকাল। দুপুরে খাবার উদ্দেশ্যে আমরা গেলাম বিখ্যাত বনলক্ষী রেস্তোরাঁর ঠিক উল্টো দিকে ‘বড়িশালের রান্নাঘরে’। নামের মাহাত্য বজায় রেখে সেখানকার শুক্তো, ডাল, কপির ডালনা, পাবদা মাছ ও গলদা চিংড়ি ছিল একেবারে অমৃতসম। 

খাওয়া দাওয়া সেরে বাড়ী এসে খানিক বিশ্রাম নিয়ে বেরিয়ে পরলাম পৌষমেলার উদ্দেশ্যে, দূরত্ব সামান্যই তাই পায়ে হেঁটেই যাওয়া গেল। তখনও সন্ধ্যে নামেনি, তবু মানুষের ঢল রাস্তায়, লক্ষ্য সকলেরই মেলা প্রাঙ্গণ; বাহারি সাজে আর চোখে মুখের উত্তেজনায় আবালবৃদ্ধ সেদিন উৎসবের ঘোরে মাতোয়ারা। মেলায় ঢোকার মুখ থেকেই শুরু হয়ে গেছে নানান দোকান, শুরুতেই ছোটদের খেলনা আর মেয়েদের সাজের জিনিষের পশরা সাজিয়ে বসে আছেন স্থানীয় মানুষ; বুঝলাম মেলার মুখ্য ক্রেতা মহিলা ও শিশুরাই। তারপর যত এগোই পরপর অজস্র দোকান, কোথাও বা রকমারি পিঠে, কোথাও তেলেভাজা ও অন্যান্য মুখোরোচক; কোথাও ঘর সাজানোর জিনিষ তো কোথাও রান্নাঘরের রকমারি। পশরা বসেছে কাঁথা ও বাটিক কাজের, আছে খাদির দোকান, শীতের পোশাক, কম্বল, শতরঞ্চিও বাদ নেই। গরম গরম আসকে পিঠে খেতে খেতে গিয়ে দাঁড়ালাম বাউল গানের আসরে, প্রায় শখানেক বাউল সেখানে মঞ্চ আলো করে বসে আছেন, সামনে কাতারে কাতারে শ্রোতা সামিয়ানার নীচে শতরঞ্চিতে বসে, দাঁড়িয়েও গান শুনছেন বহু মানুষ শীতের পরোয়া না করেই। মাথার ওপর পূর্ণচন্দ্র, মঞ্চেও জোছনা মাখামাখি; উদ্দাত্ত কন্ঠের গান, সঙ্গতে শুধু একতারা আর বাঁশী; শুনতে শুনতে রাত কখন গভীর হয়েছে বুঝতেই পারিনি। একসময়, বন্ধুর ডাকে চেতনা ফিরল, বুঝলাম এবার ফেরা উচিৎ। হাতে একরাশ কড়ি কাঠের গয়না, আর মনের ভেতর উদাসী ভাললাগা নিয়ে আস্তানায় ফিরেছিলাম সেদিন। 
নানা রঙের মেলা

হাতের কাজে ব্যস্ত দোকানী

বাউল গানের আসর

পরদিন খোয়াইয়ের সূর্যোদয় যেন নতুন করে বাউলের সুরে বেঁধেদিল মনটাকে; দিনের বেলা আবার ছুটলাম মেলায়সকালের ঝলমলে আলোয় গতরাতের মায়াবী প্রাঙ্গণ যেন চঞ্চলা কিশোরী, আকর্ষণ তারও কিছু কম নয়। এক চা ওয়ালা ভাইকে জিজ্ঞেস করে জানলাম, তিনি থাকেন অজয়ের পাড়ে; ‘মেলা শেষে কি করবেন?’ আমার প্রশ্নে হেসে জানালেন, ‘যাবো জয়দেবের মেলায়’। বুঝলাম মনটা তাঁরও বাউল, মেলাতেই যার বাস। দুপুর বেলা ফিরে চললাম কোলকাতায়, সারাটা রাস্তা মনের একটা কোনায় লেগে রইলো মন খারাপের সুর, আর একটা কোনা অনেক প্রাপ্তির আনন্দে টইটুম্বুর।
গেরুয়া সকাল

ভোরের আলোয় খোয়াই

***