অচিরাবতীর তীরে, ছোট একখানি গ্রাম,
একপাশে তার ছায়ামাখা তরুবীথি মঞ্জরিত বসন্ত সমাগমে;
কিংশুক রাঙা বনপথে, আমার নিত্য আসা যাওয়া গাগরী ভরনে।
দিনান্তের গোধূলী বেলায়, ধীবর নৌকাখানি ফেরে ঘাটে,
সোনামাখা জলে ছায়া ফেলে তোমার সুঠাম দেহ, হাতে মোহনিয়া বাঁশী,
বাজাও উজানের সুর বাঁশরীর তানে, মুখে স্মিত হাসি।
ক্ষণিকের চকিত চাহনি খুঁজে নেয় একে অপরের পথ চাওয়া,
আকাশের অস্তরাগ ঘন হয় আমার লজ্জানত মুখে,
নিবিড় আবেগ মুগ্ধতা আনে তোমার দুচোখে;
সাক্ষী থাকে মহাকাল।
চৈতী পূরণ্মাসী, মদনোৎসবে মাতোয়ারা কুঞ্জবন,
জাতি, যূথী, কিংশুক, চম্পকে পাতায় পাতায় বর্ণময় আলাপন,
রাঙা বাস, হরিদ্রায় ছোপানো উত্তরীয়, গলায় চম্পক মালা,অভিসার সাজে –
যুগলে প্রেমিকের দল, ঘুরে ফেরে উৎসুক উচ্ছ্বাসে বন মাঝে।
আমি বসে থাকি ঘাটের কিনারে, কলসী হাতে, চোখে ভীরু চঞ্চলতা,
ধীরে ধীরে সূর্য মিলায় অস্তাচলে, নদীর মর্মরধ্বনি একাকার হয়ে যায় আমার বক্ষ
স্পন্দনে,
শূন্য ঘাটে একেলা আমি নিস্ফল অপেক্ষায়, উৎসব দিনে আসবে না সে, মন জানে;
চন্দ্রকিরণে অচিরাবতীর জল তরল অভ্র, আমার দুচোখেও তার রেশ,
অর্থহীন করুণ বিষাদে উঠে আসে দীর্ঘশ্বাস আনমনে,
দখিনা বাতাস ছুঁয়ে যায় কপালের চূর্ণ কেশ আলতো চুম্বনে।
আলগোছে একখানি কুন্দমালিকা ঝরে পড়ে কন্ঠে আমার আচম্বিতে,
চমকে তাকাই পিছে, বাঁশী হাতে রয়েছ দাঁড়িয়ে, কন্দর্পের বেশে,
‘আজি সব অপেক্ষার শেষ’, নিবিড় আলিঙ্গনে জড়িয়ে আমায় বলেছিলে হেসে,
মনে পড়ে?
যুগান্ত পরে, সেই কুন্দহার আজও আছে রাখা সঙ্গোপনে,
বৈজয়ন্ত সম পরম আদরে, হৃদয়ের এককোণে;
সেদিনের মোহনিয়া তান বাঁশীর সুরে,
আজও কি তোমার মনে পড়ে?
***
©2016 ananyapal ALL RIGHTS
RESERVED
Opurbo. Ki bhasha, ki rochona, ganer moto mon chuye galo
উত্তরমুছুনMohoniyo
উত্তরমুছুন